চর্তুমুখী সংকটে সিরামিক শিল্প, ১ বছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার

সিরামিক শিল্প
সিরামিক পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে কারখানাগুলোয় যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দেশের সিরামিক শিল্প চলমান সংকট থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকটের কারণে তাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে।

এই শিল্পের অন্যতম প্রধান সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এটি সিরামিক পণ্যের স্থানীয় চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৭৩ শতাংশে। ২০১১-১২ অর্থবছরের পর এটি সর্বোচ্চ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত চার-পাঁচ মাসে সিরামিক পণ্যের বিক্রি কমেছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারেও করুণ দশা। সিরামিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সিরামিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৩৯ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার।

গত দুই মাসে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। চার জেলায় গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিকের উৎপাদন অনেক কমেছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদেরকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকার উৎপাদন সংক্রান্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নরসিংদীতে ২৫টির মতো সিরামিক কারখানায় গত দুই মাস ধরে পর্যাপ্ত গ্যাস নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে সিরামিক কারখানাগুলোর সাধারণত প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে (পিএসআই) ১৫ পাউন্ড গ্যাসের চাপ দরকার। পাওয়া যাচ্ছে সাত থেকে আট পিএসআই।'

'আগে যেখানে প্রায় সাত শতাংশ পণ্য মানসম্মত হতো না, এখন গ্যাস সংকটের কারণে তা হয়েছে ২০ শতাংশ। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মুনাফা কমেছে অন্তত ২৫ শতাংশ।'

তিনি জানান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় কয়েকটি কারখানায় উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

মো. মামুনুর রশিদেন মতে, সিরামিক শিল্পের বিকাশে অন্যান্য বাধা কাঁচামালের ওপর পাঁচ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক, উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ।

এ ছাড়াও, মূলধন ও যন্ত্রপাতি কেনায় ঋণের উচ্চ সুদ এ শিল্পকে আরও সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জরুরি উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিসিএমইএ।

বিসিএমইএ সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা গত মে মাস থেকে সিরামিক শিল্পে চলমান গ্যাস সংকটের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন।

'উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে' উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'গ্যাসের চাপ কখনো দুই থেকে তিন পিএসআই থেকে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে।'

সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ব্যাখ্যা করে বলেন, সিরামিক গ্যাস নির্ভর শিল্প। এর প্রাথমিক কাঁচামালগুলোর একটি প্রাকৃতিক গ্যাস। সিরামিকের মোট উৎপাদন খরচের ১০-১২ শতাংশ যায় গ্যাসের পেছনে।

তিনি আরও বলেন, 'এক হাজার ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোড়ানো হয় বলে সিরামিক পণ্য তৈরিতে চুল্লিগুলোয় ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দরকার হয়। গ্যাসের নির্দিষ্ট স্তরের চাপ ছাড়া উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।'

'গ্যাসের চাপ কমে গেলে চুল্লির ভেতরের সব পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। চুল্লি বন্ধ হয়ে গেলে তা চালু করতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। অনেক সময় মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হয়।'

ফার সিরামিকস লিমিটেডের পরিচালক ইরফান উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদন লোকসানের কারণে রপ্তানি কমেছে। প্রয়োজন মতো গ্যাস না পেলে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিম্নমানের পণ্য রপ্তানি করাও সম্ভব নয়। এটি এই শিল্পের ভাবমূর্তির বিষয়।'

তাই এ বছর রপ্তানি অনেক কমেছে।

বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার সম্ভব নয়, কারণ এটি উৎপাদন খরচ ২৫ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দেবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Remittance-rich Sylhet ranks poorest in new index

Long seen as the “London of Bangladesh” for its foreign earnings and opulent villas, Sylhet has been dealt a sobering blow. The country’s first Multidimensional Poverty Index (MPI) has revealed that the division is, in fact, the poorest in Bangladesh when measured by access to education, healthc

6h ago