প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প

রপ্তানির শীর্ষে বিস্কুট, ক্যান্ডি, নুডলস

বাপা, ক্যান্ডি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প, রপ্তানি, মধ্যপ্রাচ্য, বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন,

বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পের রপ্তানি পণ্যের শীর্ষ পাঁচটির একটি এখন ক্যান্ডি। অথচ এক দশক আগেও এই পণ্যটি রপ্তানিকারকদের আগ্রহে ছিল না। এছাড়াও দেশের আরেকটি প্রধান রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠেছে নুডলস।

বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরের শীর্ষ ১০ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য। কিন্তু, বর্তমানে পানীয়র পরিবর্তে বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য এই শিল্পের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠেছে।

এই তথ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে স্পষ্টভাবে পরিবর্তনের দিকটি ফুটে উঠেছে।

দেশের বৃহৎ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিকারক প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, 'এক দশক আগেও বাংলাদেশে ক্যান্ডি তৈরির কারখানা ছিল। কিন্তু আমরা এই মিষ্টান্ন পণ্যের জন্য বিদেশের বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করিনি। তবে, আমরা গত পাঁচ বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।'

বাপার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যান্ডি রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ডলার। এই সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্যাটাগরিতে চতুর্থ উপার্জনকারী পণ্য ছিল ক্যান্ডি। বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য তালিকার শীর্ষে ছিল এবং মসলা ও পানীয় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশে মসলার চাহিদা বাড়ছে।

বাপার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ খাদ্য পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৫৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যার ৯১ শতাংশ এসেছে শীর্ষ ১০টি পণ্য থেকে।

যদিও বাপা এখনো ২০২২-২৩ অর্থবছরের পণ্যভিত্তিক রপ্তানি আয়ের তথ্য সংকলন করেনি।

ইলিয়াস মৃধা বলেন, দেশীয় রপ্তানিকারকরা প্রাথমিকভাবে মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত বাংলাদেশিদের প্রাধান্য ‍দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'তবে আমরা বছরের পর বছর ধরে বিদেশিদের বিষয়টি মাথায় রেখে রপ্তানির তালিকায় উচ্চ মানের পণ্য যোগ করেছি। আরবরাও বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মিষ্টান্ন এবং বিস্কুট কেনেন।'

তিনি জানান, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে মিষ্টির সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি। আমরা জানতে পারি, সেখানের বাজারের যেসব ক্যান্ডি পাওয়া যায় সেগুলো তুরস্কের এবং বেশ ব্যয়বহুল।

প্রাণের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'তাই আমরা বাজার ধরতে চেষ্টা করেছি এবং ভালো করেছি।'

কনফেকশনারি পণ্যের জন্য তরল গ্লুকোজ তৈরিতে তারা চুক্তিভিত্তিতে কাসাভা চাষ করছে, যা রপ্তানির তালিকায় পানীয় পণ্য যোগ করেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও আসিয়ান অঞ্চলে ক্যান্ডি বিক্রি করছি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর পরিমাণে ক্যান্ডি পণ্য সরবরাহ করছি। অতীতে বাংলাদেশি ভোক্তাদের ওপর মনোযোগ থাকলেও এখন সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করেছি।'

তিনি মন্তব্য করেন, ক্যান্ডির ক্রমবর্ধমান রপ্তানি বৃদ্ধি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ক্যাটাগরি থেকে আয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকটি ইঙ্গিত করে, যা দেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণে অবদান রাখবে।

এদিকে বাংলাদেশের তৈরি নুডলস ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নাজিম উদ্দিন বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে বিস্কুট ও মিষ্টান্ন বিক্রির জন্য লক্ষ্যবস্তু করেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা রপ্তানি আয় বাড়াতে পেরেছে।

নাজিম উদ্দিন বলেন, 'আমাদের বিস্কুট ও ড্রাই কেক আরবসহ বিদেশি ভোক্তাদের কাছেও জনপ্রিয়।'

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি।

বিদেশে বসবাসরত ও কর্মরত এক কোটি বাংলাদেশির প্রায় এক-চতুর্থাংশই সৌদি আরবে বসবাস করেন। সুতরাং, দেশটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের বৃহত্তম গন্তব্য এবং আগামী বছরগুলোতে সেই অবস্থান বজায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের রপ্তানি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আহমেদ ফরহাদ বলেন, 'স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্পন্ন বিস্কুট তৈরি করছে। আগামী বছরগুলোতে মালয়েশিয়ায় বাজার বাড়বে, কারণ অনেক প্রবাসী ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন।

পারটেক্স স্টার গ্রুপের মালিকানাধীন ড্যানিশ ফুডস লিমিটেডের হেড অব বিজনেস (এক্সপোর্ট) দেবাশীষ সিংহ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়াজাত খাবারের বাজার বিশাল এবং প্রচুর সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, 'স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করতে হবে এবং আরও বাজার বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।'

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিনিজাত মিষ্টান্ন রপ্তানি আগের অর্থবছরের ২৯ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তবে, নুডলস ও পাস্তার মতো পণ্য রপ্তানি ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৩৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

প্রাণের ইলিয়াস মৃধা বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের ৬৮ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা ও বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ে গঠিত আসিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে সরকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে।

তিনি বলেন, 'মৌলিক মসলার বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং মিশ্র মসলার চাহিদা বাড়ছে।'

দারুচিনি ও জিরার শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago