ডিসেম্বরের মধ্যে সেডান কার আনতে চায় প্রগতি
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (পিআইএল) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি সেডান কার সংযোজন করতে যাচ্ছে।
প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'জাপানি বা কোরিয়ান ব্র্যান্ড যাই হোক না কেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে সেডান সংযোজন শুরু করব। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।'
এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারীর নকশা করা গাড়ি সংযোজনে একটি সম্পূর্ণ নক-ডাউন সেটআপ স্থাপনের জন্য মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের (এমএমসি) সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল প্রগতি।
আবুল কালাম আজাদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিন্তু এমসিসি এখনো আমাদের জানায়নি যে তারা কীভাবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে। তবুও, আমরা শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।'
তিনি আরও বলেন, তারা এমএমসির প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সেডান সংযোজনে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রসারিত করবেন।
তিনি বলেন, 'এটি বাস্তবায়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিস্তারিত পরিকল্পনা এমএমসিতে পাঠানো হয়েছে। আমরা এমএমসির সঙ্গে পরিকল্পনা শেয়ার করেছি, যেন তারা প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।'
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রগতির লক্ষ্য দেশের গ্রাহকদের জন্য ১২০০ সিসি ও ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মিতসুবিশি সেডান সংযোজন করা। আশা করা হচ্ছে, কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি না হলে ২০২৪ সালের শুরুতে নতুন গাড়ি বিপণনে প্রচারণা শুরু করতে পারবে প্রগতি।
তিনি বলেন, সম্পূরক শুল্ক না থাকায় আমদানি করা মডেলের তুলনায় স্থানীয়ভাবে সংযোজিত মডেলের দাম অন্তত ৫ লাখ টাকা কম হবে।
তিনি মনে করেন, সেই হিসাবে অদূর ভবিষ্যতে ক্রেতারা ন্যায্য মূল্যে ব্র্যান্ড নিউ 'মেইড ইন বাংলাদেশ' সেডান পাবেন।
আজাদ আরও বলেন, 'আমরা ধীরে ধীরে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত ইউনিটের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করব, যেন এটিতে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগ দেওয়া যায়। প্রগতিতে দক্ষ প্রযুক্তিবিদ আছেন, যাদের মিতসুবিশি গাড়ি সংযোজনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।'
এ ছাড়া জাপান থেকে ইঞ্জিনের সঙ্গে চেসিস আমদানি করা হবে বলে এ ধরনের সেডান অ্যাসেম্বলিং করা সহজ হবে বলে তিনি জানান।
প্রগতি বর্তমানে পাজেরো স্পোর্ট, অ্যাকটিভ স্পোর্টস ক্রসওভার ও জাপানি ব্র্যান্ডের ডাবল-কেবিন পিকআপের পাশাপাশি ভারতের টাটার নকশা করা বাসের মতো স্পোর্টস ইউটিলিটি যানবাহন সংযোজন করে।
গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্পে আমদানি করা গাড়ির পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে তৈরি প্রগতির গাড়ি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাজেট প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, প্রগতি নিজেই সেডান অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করবে।
তার মতে, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের ভিত্তিতে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০০টি সেডান সংযোজন করা হবে।
তিনি বলেন, 'এরপর ধীরে ধীরে অ্যাসেম্বল করা গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হবে।'
১৯৬৬ সাল থেকে মিতসুবিশি বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম প্রগতির সঙ্গে আউটসোর্সিং করে আসছে।
গত অর্থবছরে প্রগতি মাত্র ১৭৭টি গাড়ি বিক্রি করেছিল, যেখানে আগের বছর বিক্রি হয়েছিল ৭১১টি গাড়ি।
আজাদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে নতুন গাড়ির চাহিদা সীমিত, এখন বেশিরভাগ মানুষ সেকেন্ড হ্যান্ড কিনছেন। তবে, দেশে ব্র্যান্ড-নিউ গাড়ি বিক্রির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মিতসুবিশির দখলে আছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১৬ হাজার গাড়ি বিক্রি হয়।
২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফরকালে এমএমসির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিউজিরো কোবাশি তাদের ব্র্যান্ডেড গাড়ি তৈরিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
Comments