‘প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অভাব প্রযুক্তি খাতের চাকরিতে প্রবেশে প্রতিবন্ধীদের প্রধান বাধা’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অভাব ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের অপ্রতুল সুযোগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি খাতের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা বলেন, ই-লার্নিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে আইসিটি দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় সুইসকন্ট্যাক্ট এবং ও দ্য ডেইলি স্টারের 'ইক্যুইটি ইন আইসিটি: ইনক্লুসিভ ট্রেনিং পাথওয়েজ ফর পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ' শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।
এসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য থাকা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও শিল্পের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে বিস্তর ব্যবধানের বিষয়টি তুলে ধরেন
বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের হেড অব অপারেশনস আজিজা আহমেদ।
তিনি বলেন, 'মূলধারার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বাজারচালিত দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তখন প্রতিবন্ধীকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, যা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'
তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে তুলতে প্রতিবন্ধীকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে মূলধারার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সহযোগিতার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, 'এক্ষেত্রে আইসিটি প্রতিষ্ঠান ও বর্তমান বাজারে যেসব দক্ষতার চাহিদা আছে সেগুলোতে ফোকাস করা উচিত।'
তার ভাষ্য, 'আমরা যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা বাড়াতে চাই, তাহলে আমাদের গ্রাফিক ডিজাইন বা ডাটা এন্ট্রির মতো মৌলিক দক্ষতার দিকে মনোনিবেশ না করে ডেটা অ্যানালিটিক্স ও সাইবার সিকিউরিটির মতো মধ্য থেকে উচ্চ-স্তরের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।'
দেশের সবচেয়ে বড় চাকরির পোর্টাল বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ করা গেলে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ঘরে বসেই আইসিটি দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
তিনি বলেন, 'আইসিটি দক্ষতা অর্জনে প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ই-লার্নিং কোর্স ও বছরব্যাপী ইন্টারনেটের পাশাপাশি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ করা উচিত। এটুকুই তাদের দক্ষ করে তোলার জন্য যথেষ্ট।'
তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত জামানতবিহীন ঋণ ব্যবস্থা চালু করা।
বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় সুইসকন্ট্যাক্ট 'বিল্ডিং ইয়ুথ এমপ্লয়াবিলিটি থ্রু স্কিলস (বিআইটিএস)' প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সুইসকন্ট্যাক্টের বিআইটিএস প্রকল্পের টিম লিডার নাদিয়া আফরিন শামস জানান, আইসিটি, তৈরি পোশাক ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ- এই তিনটি খাতে কাজ করছে সুইসকন্ট্যাক্ট। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৬ সালের মধ্যে ১২টি জেলার ২৫ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, চলাফেরা করতে পারে এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইসিটি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। তাই বিআইইটিএস প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডের (সিআরপি) সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে।
'উপযুক্ত অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান ও সক্ষমতার অভাবে প্রাথমিকভাবে এটা চ্যালেঞ্জিং। এমনকি প্রশিক্ষণের পরও, অনেকে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগের অভাবে কাজ করতে অসুবিধায় পড়বেন। এই ঘাটতি পূরণে মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অংশীদারিত্ব প্রয়োজন,' বলেন তিনি।
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেন, অগ্রগতি হলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টি এখনো আশাব্যঞ্জক নয়।
'তবে এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ যে, আমরা এই প্রচেষ্টা শুরু করেছি,' যোগ করেন তিনি।
এই পরিস্থিতির উন্নয়নের নেওয়া কর্মসূচি প্রণয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সুইসকন্ট্যাক্টের প্রকল্পের আওতায় সিআরপির প্রশিক্ষণার্থী রিদুয়ান রহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের উপদেষ্টা রুহি মুর্শিদ আহমেদ, সিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিলের সিইও বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী, এটুআইয়ের অ্যাকসেসিবিলিটির ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য, টিভিইটি ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং এক্সপার্ট ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফর হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স হরি পদ দাস এবং ইউএন উইমেনের যোগাযোগ বিশ্লেষক শরারাত ইসলাম।
গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালনা করেন দ্য ডেইলি স্টারের এনজিও ও বিদেশি মিশনের ইনচার্জ তানজিম ফেরদৌস।
Comments