নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে টানা তিন বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স।
নাসা, টিম ভয়েজার্স, বেসিস, নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ,
বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স। ছবি: সংগৃহীত

নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স। এ নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় টানা তিনবার এবং মোট চারবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) দশমবারের মতো এই প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করে।

এবারের প্রতিযোগিতায় ১৫২টি দেশ থেকে ৩০টি ক্যাটেগরিতে ৮ হাজার ৭১৫টি দলের ৫৭ হাজার ৯৯৯ জন বিভিন্ন বয়স, পটভূমি, আগ্রহ ও দক্ষতারভিত্তিতে অংশগ্রহণ করেন। যা এখন পর্যন্ত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে বড় আয়োজন।

বিশ্বের সর্বমোট ৫ হাজার ৫৫৬টি প্রজেক্টের মধ্যে বাংলাদেশ অতুলনীয় উদ্ভাবন প্রদর্শন করেছে, যা মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদীয়মান প্রতিভার অনন্য দৃষ্টান্ত।

রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজার্স-এর প্রজেক্টের মূল প্রতিপাদ্য 'এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার'। পৃথিবীতে ৩৭০ কোয়িন্টিলিয়ন গ্যালন পানি আছে। তবে এর মধ্যে আমাদের ব্যবহার্য নিরাপদ পানির পরিমাণ শুধু শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ। তাদের মিশন ছিল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ পানি প্রবাহের পথ বোঝানোর জন্য একটি দৃশ্যাত্মক সরঞ্জাম তৈরি করা, যা শিক্ষার্থীদের পৃথিবীর সিস্টেমে পানির প্রবাহ পথ ও এই অমূল্য সম্পদ কীভাবে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে তা বোঝানো।

বিশ্বজয়ী টিম ভয়েজার্স-এর দলনেতা মো. খালিদ সাকিব। এছাড়া দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- মো. আব্দুল মালেক, মো. সাখাওয়াত হোসেন, ফাহমিদা আক্তার এবং মো. আতিক।

দলনেতা মো. খালিদ সাকিব বলেন, 'ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করা থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এই যাত্রাটা এতো সহজ ছিল না আমাদের জন্য। তবে এখন বিশ্ব দরবারে নিজের দেশের নাম তুলে ধরতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই গর্বিত। এত বড় অর্জনে সবসময় আমাদের পাশে থাকায় বাংলাদেশ পর্বের আয়োজক বেসিস কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।'

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর বাংলাদেশ পর্বের আহ্বায়ক ও বেসিসের পরিচালক তানভীর হোসেন খান বলেন, 'এই বিশ্বজয় আমাদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ। বাংলাদেশ আবারও দেখিয়েছে যে বৈশ্বিক মঞ্চের সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কীভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়।'

বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, 'নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে আমাদের এই বিশ্বজয় বাংলাদেশিদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে তা আবারও প্রমাণ করেছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৫২টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের এক করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের অক্টোবরে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের নয়টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা) বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করেছিল।

এর আগে, ২০১৮ সালে 'লুনার ভিআর প্রজেক্ট' বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'টিম অলীক'। ২০২১ সালে 'বেস্ট মিশন কনসেপ্ট' ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল 'টিম মহাকাশ' এবং ২০২২ সালে 'টিম ডায়মন্ডস' 'সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক' বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়।

Comments