ব্যাংকের সিএসআর বাজেটের অর্ধেক গেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, অধিকাংশই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে

সিএসআর
জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও পরিবেশ খাতে সিএসআর খরচ হয়েছিল মোটের চার শতাংশ। ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের প্রথমার্ধে দেশের ব্যাংকগুলো তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যয়ের ৪৫ শতাংশ ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া হয়েছে এসব অর্থ।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলো ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে সিএসআর ফান্ড থেকে ৩০৯ কোটি টাকা খরচ করেছে, যার মধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা গেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাতে অনুদানের মধ্যে রয়েছে দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ। আগস্টের শেষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণও হয়েছে এই টাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত সিএসআর নীতি অনুসারে, একটি ব্যাংক তাদের মোট সিএসআর ফান্ডের ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, ৩০ শতাংশ শিক্ষায়, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যে এবং ২০ শতাংশ পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে প্রদান করবে।

তবে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৭১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এই অনুদান মূলত দরিদ্র ও অক্ষম রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ব্যয় হয়।

এ ছাড়া, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্মাণ ও অপারেশনাল খরচ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য এই খাত থেকে অনুদান দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে শিক্ষাখাতে, যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ খাতে ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানে চলে গেছে।

বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ ও শিক্ষাখাতে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টেও অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি উপখাতে নয় কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজন খাতে সাত কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা সর্বনিম্ন।

পরবর্তীতে বৃক্ষরোপণসহ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রকল্পের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের সিএসআর ব্যয়ের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথমার্ধের ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যয় কমেছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ৩৫৩ কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে সিএসআর ব্যয় আগের ছয় মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও সিএসআর ব্যয় কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কোনো অর্থ দেয়নি।

তবে, এবি ব্যাংক এক কোটি ৬০ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংক তিন কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ছয় কোটি ৯৮ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ১৩ লাখ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৬৬ লাখ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সাত কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক চার লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে।

ব্যাংকাররা দাবি করছেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) মাধ্যমে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় পরিচালিত বিভিন্ন তহবিলে তাদের অর্থ জমা দিতে হয়েছে।

বিএবি ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার জানান, বেশিরভাগ সিএসআর তহবিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত তহবিলে পাঠানো হয়েছে আবাসন ও বন্যায় ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য।

তিনি বলেন, 'এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। টাকা দেবো না—এমন বলার কোনো উপায় ছিল না।'

তিনি জানান, শাসনব্যবস্থার যেহেতু পরিবর্তন হয়েছে, এখন নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হবে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের নিট মুনাফার আড়াই শতাংশ সামাজিক উদ্যোগে ব্যয় করতে হয়।

তিনি বলেন, 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বেশি ব্যয় করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে আমাদের মনোযোগ কমে যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

The constitution: Reforms only after a strong consensus

Constitutional reforms should be done after taking people’s opinions into account, said Dr Kamal Hossain, one of the framers of the constitution.

2h ago