ঝিমিয়ে পড়েছে পাহাড়ের পর্যটন, ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তা

খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, পর্যটক, পর্যটন খাত, সহিংসতা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা,
ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সহিংসতায় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির চিরচেনা দৃশ্যগুলো যেন হারিয়ে গেছে। হোটেলগুলো ফাঁকা, রাস্তার ধারে পড়ে আছে বিক্রি না হওয়া পাহাড়ি ফল, পর্যটকবাহী জিপগুলোও অলস পড়ে আছে। অথচ এসময় পর্যটকে মুখর থাকার কথা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলো।

পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন এলাকা ভ্রমণে দর্শনার্থীদের নিরুৎসাহিত করছে প্রশাসন। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে, গত দুই সপ্তাহে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে, এ বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের শেষের দিকে পার্বত্য জেলাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় তিন মাস কম ছিল। এরপর পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং পাহাড়ি পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছিল। জুলাইয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ছাত্র আন্দোলন শুরুর আগ পর্যন্ত ভালোই চলছিল এ অঞ্চলের পর্যটন।

এরপর আগস্টে সরকারের পদত্যাগের পরের পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে পাহাড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে পর্যটন খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা যেন মুখ থুবড়ে পড়ে।

এ অস্থিরতার মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন গতকাল সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশনা জারি করেছে। এটিকে ভরা পর্যটক মৌসুমে 'পাহাড়ের রানি' খ্যাত জেলাটির পর্যটন ও পর্যটনকেন্দ্রীক অন্যান্য ব্যবসার জন্য আরেক ধাক্কা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলা পিক সিজনে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক সাজেক ভ্যালিতে ঘুরতে যান। তাদের থাকার জন্য সেখানে প্রায় ১৩০টি হোটেল ও মোটেল আছে।

সাজেকের কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিআরওএ) সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, 'গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা পর্যাপ্ত অতিথি পাচ্ছি না। অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলেও নেই।'

'পর্যটক কমে যাওয়ায় আমাদের আয়ও অনেক কমেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কেবল কটেজ ও রিসোর্ট মালিকরা নয়, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন আদিবাসীরা পর্যটকদের কাছে কমলা, আনারস, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু ও তরমুজ বিক্রি করে। তাই পর্যটক না এলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের জীবিকার অন্যতম উৎস এটা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের পর্যটন খাতের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৭৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

দেশে ৩০টি পর্যটন গন্তব্য রয়েছে। বছরে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ স্থানীয়রা এসব স্পট পরিদর্শন করেন।

অনানুষ্ঠানিক এক হিসাব অনুযায়ী, দেশীয় পর্যটকের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ পার্বত্য জেলাগুলোতে ভ্রমণ করেন। এছাড়া কক্সবাজারসহ তিনটি পার্বত্য জেলা ঘুরতে যান ৫৫ শতাংশ দেশীয় পর্যটক।

সাজেকের কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ণা দেববর্মণ বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি কেবল সাজেক ভ্যালির প্রভাব ফেলছে না, পুরো রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন ও ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাঙ্গামাটি শহরের কটেজ ও রিসোর্টের মালিকরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।'

রাঙ্গামাটি শহরের গ্যালারি হোটেলের মালিক মৌসুমী চাকমা জানান, তারা সাধারণত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট খোলা রাখেন। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাঙ্গামাটি হলিডে কমপ্লেক্সের ম্যানেজার অলক বিকাশ চাকমা বলেন, গত সপ্তাহের সহিংসতার পর পর্যটকের অভাবে প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাঙ্গামাটি শহরের আয় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

তার ভাষ্য, 'পর্যটকরা এখন রাঙ্গামাটি ভ্রমণে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।'

তিনি জানান, রাঙ্গামাটি শহরে প্রায় ৬০টি হোটেল রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার নিসর্গ রিভার ভ্যালির ব্যবস্থাপক সারোয়ার হোসেন বলেন, গত জুলাই থেকে পর্যটকের অভাবে ব্যবসা ঝিমিয়ে পড়েছে।

তবে পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলার পর্যটন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, কারণ সেখানে এখনো পর্যটক আসছেন। সম্প্রতি এ জেলায় কোনো সহিংস ঘটনাও ঘটেনি।

বান্দরবান শহরের হিল সাইড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রয়েল বম বলেন, শহরের প্রায় সব হোটেল ও রিসোর্টে প্রতিদিন প্রত্যাশিত অতিথি আসছেন। এখানে স্থানীয়দের মধ্যেও কোনো আতঙ্ক নেই।

এই পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা জানান, বগা লেক, তাজিং ডং, কেওক্রাডং, রেমাক্রি জলপ্রপাত ও নাফাখুমের মতো দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণ ইচ্ছুক পর্যটকের সংখ্যা এ বছরের শুরু থেকে কমে গেছে। এতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসীদের আয় কমে গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

From gravel beds to tourists’ treasure

A couple of decades ago, Panchagarh, the northernmost district of Bangladesh, was primarily known for its abundance of gravel beds. With thousands of acres of land devoted to digging for the resource, the backbone of the region’s rural economy was based on those natural resources.

13h ago