সীমান্তে চিনি চোরাচালান বেড়েছে, বৈধ উপায়ে আমদানিতে ধস

চিনি, চিনি আমদানি, আমদানি শুল্ক, এনবিআর,
স্টার ফাইল ফটো

প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে চিনি ঢুকছে বাংলাদেশের বাজারে। চিনির এই চোরাচালানের কারণে রিফাইনাররা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের চিনি আমদানি কমেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রিফাইনারদের অপরিশোধিত চিনি আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।

দেশের অন্যতম চিনি আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'চোরাচালানের কারণে স্থানীয়ভাবে পরিশোধিত চিনির চাহিদা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।'

'চাহিদা না থাকলে আমরা কেন আমদানি করব,' বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, মেঘনা গ্রুপ প্রতিদিন তিন হাজার টন চিনি সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু এখন মিলে চিনির চাহিদা সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'ভারত চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম চড়া। একই সঙ্গে সরকার অপরিশোধিত চিনির ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এই সুযোগে এক শ্রেণির মানুষ সীমান্ত দিয়ে চিনি পাচার করছে।'

তিনি বলেন, 'এটা আমাদের খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছে।'

চিনি উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত ২০২২ সালের জুন থেকে রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। দেশটি অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে নিষেধাজ্ঞা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশে বার্ষিক ২৪ লাখ টন চিনির চাহিদা আছে। দেশের পাঁচ পরিবেশক মূলত ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে এই চাহিদার প্রায় ৯৯ শতাংশ পূরণ করে।

কিন্তু দেশের চিনিকলগুলো চাহিদার মাত্র এক শতাংশ পূরণ করতে পারে।

মেঘনা গ্রুপের তসলিম শাহরিয়ার বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যে চিনি আনা হচ্ছে, তার পরিমাণ প্রায় সাত লাখ টন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ চিনি শোধনাগার সমিতি (বিএসআরএ) দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ চিনি চোরাচালান নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে এসব চিনি জব্দ করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংকলিত কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, পরিশোধিত চিনি আমদানি বছরের ব্যবধানে ২২ শতাংশের বেশি কমেছে। ২০২৪ অর্থবছরে দেশে এক লাখ ৩৯ হাজার টন পরিশোধিত চিনি এসেছিল, যা আগের বছর ছিল এক লাখ ৭৯ হাজার টন।

দেশের আরেক বৃহত্তম পণ্য আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, গত দেড় বছর ধরে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অবৈধভাবে চিনি আসছে।

তিনি বলেন, 'যেহেতু এই চিনি কোনো শুল্ক ছাড়াই আসছে, এতে দেশীয় পরিবেশকরা বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে।'

'অবৈধভাবে আনা চিনি মানের দিক থেকে নিম্নমানের এবং এগুলো স্থানীয় ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করা হয়। ফলে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত করছে,' বলেন তিনি।

দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, চিনি আমদানি কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণের মধ্যে আছে ঋণপত্রের (এলসি) উচ্চ মার্জিন ও ঋণপত্র খোলার সমস্যা।

তিনি মন্তব্য করেন, 'এছাড়া আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। তাই ঋণপত্র খুলতে ও আমদানি শুল্ক পরিশোধে আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়।'

বর্তমানে আমদানিকারকদের অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এর অর্থ প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক বাবদ ৪০ টাকার বেশি খরচ হয়।

তাই রিফাইনাররা শুল্ক কমিয়ে প্রতি কেজি প্রায় চার টাকা করার আহ্বান জানিয়েছে।

সরকারের উচিত অবিলম্বে চিনি ও তেলের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা। ঋণপত্রের মার্জিন ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন গোলাম মোস্তফা।

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago