চরের কৃষকদের আশীর্বাদ মিষ্টি আলু
জামালপুরের চরাঞ্চলের চাষিদের আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে মিষ্টি আলু। কম খরচে সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং স্বল্প সময়ে বেশি ফলনে খুশি কৃষক।
যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদ-নদীর চরে শুকনো মওসুমে অন্য ফসলের চেয়ে মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জমির মালিক ও বর্গা চাষিরা।
জেলার সদর উপজেলা, সরিষাবাড়ী ও মাদারগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানের চরাঞ্চলে গিয়ে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র জানা গেছে।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এক হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ফলন হয়েছিল এর চেয়েও বেশি।
চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৩ হেক্টর বেশি জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন কৃষকরা।
এর মধ্যে আছে ইসলামপুর উপজেলায় ২৩০ হেক্টর, মাদারগঞ্জে ১৯০ হেক্টর, দেওয়ানগঞ্জে ৪৮ হেক্টর, মেলান্দহে ১৫ হেক্টর, বকশীগঞ্জে ২০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৫৮০ হেক্টর ও সরিষাবাড়ীতে ৫৮০ হেক্টর জমি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বছর জেলায় ২৯ হাজার ৫১০ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে। এটি গত মওসুমের চেয়ে এক হাজার ১৫৭ টন বেশি।
অধিদপ্তর জানায়, প্রায় ১৪ জাতের মিষ্টি আলুর বীজতলা ও চারা জন্মেছিল। হাইব্রিডের ভালো ফলন হয়েছে। অন্যান্য জাতের চেয়ে স্থানীয় জাতের মিষ্টি আলুও বেশি চাষ হয়েছিল।
চাষ করা জাতগুলোর মধ্যে বারি-২, বারি-৩, বারি-৪, বারি-৮, বারি-৯, বারি-১৪, কমলা সুন্দরী, তৃপ্তি, ওকিনাওয়া, মুরাসাকি, কেকেই-১৪, পার্পল স্টার, মুরাসাকি (জাপানি) উল্লেখযোগ্য।
ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি গ্রামের কৃষক নাজিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে প্রায় সাত বিঘা জমিতে দুই জাতের আলু চাষ করেছি। আশা করছি, তিনগুণ লাভ হবে।'
সরিষাবাড়ী উপজেলার পারপাড়া গ্রামের কৃষক ময়নুল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্য সব ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে মিষ্টি আলু চাষ করছি।'
একই উপজেলার আজাদ আলী জানান, তিনি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৯০ মণ মিষ্টি আলু পেয়েছেন। বাজারে প্রতি মণ মিষ্টি আলু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপ সিনহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চর এলাকায় মিষ্টি আলু চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কৃষকদের অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম করতে হয়। বাজারদরও ভালো। কৃষকরা বিস্তীর্ণ বালু মাটির এলাকা মিষ্টি আলু চাষের আওতায় এনেছেন।'
জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর মিষ্টি আলুর চাষ ভালো হয়েছে। এলাকার মাটি ও আবহাওয়া মিষ্টি চাষের অনুকূল হওয়ায় কৃষকরা বাম্পার ফলন পাচ্ছেন।'
Comments