মন্দা সময় পার করছে যানবাহন বিমা ব্যবসা

যানবাহন, বিমা, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, যানবাহন বিমা,
আগে মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাস ও ট্রাকের মতো যানবাহনের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

বাংলাদেশে যানবাহন বীমা ব্যবসা মন্দা সময় পার করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইনি বাধ্যবাধকতা ও আস্থার অভাবে বিমাকারীরা যানবাহনের বিমা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

আগে মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাস ও ট্রাকের মতো যানবাহনের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু, সরকার ২০১৮ সালে এই ব্যবস্থা তুলে নিলে বিমা ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে।

যেমন- পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০২০ সালে ৪৭ হাজার ২২৪টি গাড়ির জন্য পলিসি খুলেছিল। কিন্তু, ২০২১ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১১ হাজার ৭৪৭, আর ২০২২ সালে আরও কমে ৯ হাজার ৯৫১ হয়েছে।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, সরকার যখন আইনটি বাতিল করে, তখন থেকে মানুষ এ বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি।

তিনি বলেন, 'মানুষ যদি ব্যাংক বা ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ নিয়ে গাড়ি না কেনে, তাহলে খুব কমই বিমা করবে। অবশ্য কিছু করপোরেট হাউজ ও কমপ্লায়েন্ট বিজনেস আছে যারা যানবাহনের বিমা করে। ঋণ নিয়ে কেনা গাড়ির জন্য বিমা বাধ্যতামূলক।'

রহমানের মতে, অনেকেই বিভিন্ন কারণে বিমা কোম্পানিগুলোকে বিশ্বাস করেন না। তাই তারা গাড়ির জন্য বিমা করেন না। সরকার যদি এটি আবার বাধ্যতামূলক না করে, তাহলে এই বিমা ব্যবসা তার তাৎপর্য হারাবে।

পিপলস ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সেক্রেটারি সরফরাজ হোসেন বলেন, যখন যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক ছিল, তখন বিমা কোম্পানির আয়ের একটি বড় অংশ এই খাত থেকে আসত।

কোম্পানিটি ২০১৭ সালে যানবাহন বিমা থেকে প্রিমিয়াম বাবদ ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করে এবং পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। কিন্তু ২০২২ সালে এই খাত থেকে কোম্পানিটির আয় কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।

'মানুষ বিমার গুরুত্ব বোঝে না। এটা দুঃখজনক,' বলেন তিনি।

যানবাহনের বিমার ক্ষেত্রে আরেকটি ধাক্কা আসে ২০২০ সালে। তখন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ যানবাহনের থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স বাতিল করে। কোনো যানবাহনের কারণে কেউ আহত বা নিহত হয়, অথবা কোনো সম্পদের বা অন্য গাড়ির ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স করা হতো।

২০১৯ সালে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ৪০ হাজার থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স পলিসি খুলে প্রিমিয়াম বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় করেছিল।

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমজানুল কাদের বিল্লাহ বলেন, এই নিয়ম বাতিলের পর পলিসি খোলার সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে এবং প্রিমিয়াম ৫০ শতাংশ কমেছে।

তিনি গ্রাহকদের যানবাহনের বিমা না কেনার কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন।

বিল্লাহ বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া বহুজাতিক কোম্পানি ও কিছু স্থানীয় কোম্পানি মূলত যানবাহনের বিমা করছে।

রাজধানীর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, কয়েক বছর ধরে কোনো বিমা ছাড়াই মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে বিমা কোম্পানি পর্যাপ্ত সহায়তা করবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ কারণে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কোনো পলিসি করিনি।'

ঢাকার আরেক বাসিন্দা আশরাফুজ্জামান ৪ বছর আগে একটি প্রাইভেট কার কিনেছিলেন। মারুফের মতো তিনিও কোনো পলিসি কেনেননি, কারণ এর থেকে কোনো সুফল পাবেন কি না তা নিয়ে আশরাফুজ্জামানাও বিভ্রান্ত।

তিনি বলেন, 'বিমা পলিসির সুবিধা পাওয়ার খুব বেশি ঘটনা আমি দেখিনি। তাছাড়া বিমা কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা নিয়ে কোনো প্রচারণা চালায় না।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, যানবাহনের বিমা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পলিসিহোল্ডারদের দায় কমাতে ও দুঘটনাজনিত ক্ষতির জন্য অর্থ প্রদানে সহায়তা করে।

'বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির প্রতি আস্থার অভাবে মানুষ যানবাহনের বিমা করছেন না। এজন্য কোম্পানিগুলো তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।'

অধ্যাপক জাহিদ আরও বলেন, এমন কিছু শর্ত আছে যেগুলো সম্ভাব্য পলিসিহোল্ডাররা পূরণ করতে পারবেন না।

সম্প্রতি, সরকার আবার যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিমা না করলে প্রতিটি গাড়ির মালিককে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে এবং আইন না মানলে পুলিশ মামলা করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত এপ্রিলে বিমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

গত মে মাসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, যানবাহন বিমা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর ৮৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল, কার, বাস ও ট্রাকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৮টি।

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago