দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে আম্রপালি আম

দেশে উৎপাদিত আমের ২৫ শতাংশ আম্রপালি জাতের। গত এক দশকে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়েছে এই জাতের আম চাষ।
ফজলি আম, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালি,
ছবি: স্টার

মাত্র এক দশক আগেও ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও গোপালভোগ আম ছিল বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতের আম। কিন্তু, এখন সেই স্থান দখল করেছে আম্রপালি বা বারি ম্যাঙ্গো-৩ জাতের আম।

দেশে উৎপাদিত আমের ২৫ শতাংশ আম্রপালি জাতের। গত এক দশকে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়েছে এই জাতের আম চাষ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন আম্রপালি জাতের, যা দেশের ৬৪টি জেলায় উৎপাদিত হচ্ছে। তবে নওগাঁ, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই চারটি জেলা সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার আম চাষি মাউইলিয়ানা পাংখুয়া জানান, 'আমি ২০১২ সালে আম চাষ শুরু করি। শুরুতে রাঙ্গুই জাতের আম চাষ শুরু করি। কিন্তু, ৩ বছর পর রাঙ্গুই আমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।'

পাংখুয়া আরও বলেন, 'প্রথমে রাঙ্গুই আম মণপ্রতি ৬০০ টাকা (৩৭ কেজি) বিক্রি হলেও পরে দাম কমে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় নেমে আসে।'

পরে তিনি বুঝতে পারেন আম্রপালি আমের চাহিদা বাড়ছে। এই আম মণপ্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপর পাংখুয়া তার ৫ একর জমিতে আম্রপালির চাষ শুরু করেন।

তিনি বলেন, 'সুস্বাদু হওয়ায় এই আমের চাহিদা বেশি। গত বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার আম্রপালি বিক্রি করেছিলাম। এ বছর সাড়ে তিন লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছি।'

তবে পাংখুয়া জানান, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এ বছর আমের উৎপাদন কম হয়েছে।

বারি ম্যাঙ্গো-৩ একটি জনপ্রিয় হাইব্রিড জাত যা দাশেরি ও নীলম জাতের থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই আমটি বাংলাদেশে পরিচিতি লাভ করে। গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরফ উদ্দিন বলেন, 'বারিতে গবেষণার পর ১৯৯৬ সালে এটি চাষের জন্য সরবরাহ করা হয়।'

এই জাতটি ২০০৯-১০ সাল থেকে বাজারে ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রধান আম উৎপাদনকারী অঞ্চল রাজশাহীসহ অন্তত ৩০টি জেলায় বারি-৩ জাতের আম চাষ হচ্ছে।সরফ উদ্দীন বলেন, 'ব্রিক্স শতাংশ দিয়ে আমের মিষ্টির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আম্রপালির মিষ্টির মাত্রা প্রায় ২৬ শতাংশ, যা সব আমের মধ্যে সর্বোচ্চ। আম্রপালির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো এটি অন্য জাতের চেয়ে বেশি দিন ভালো থাকে। সহজে পচে যায় না, অর্থাৎ মৌসুমে দীর্ঘ সময়ের জন্য আম্রপালি পাওয়া যায়।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি  আম্রপালি আম চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কৃষক সোহেল রানার ১৫০ বিঘা জমির আমবাগান আছে, তার মধ্যে ৭০ বিঘায় আম্রপালি গাছ আছে।

তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে আমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় আম্রপালি জাতের মাধ্যমে। এই আম চাষে ভালো লাভ হয়।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্যোক্তা মুনজের আলম বলেন, 'আম্রপালি একটি হাইব্রিড জাত, যা রোপণের দ্বিতীয় বছর থেকেই ফল পাওয়া যায়। এছাড়া, আম্রপালি গাছ অন্যান্য জাতের তুলনায় কম জায়গা নেয়, অর্থাৎ কম জমিতে বেশি গাছ লাগানো যায়। পাশাপাশি ক্রেতাদের থেকেও প্রচুর চাহিদা আছে।'

৮ বিঘা জমিতে আম্রপালি আম চাষ করা আলম বলেন, 'বর্তমানে এই জাতটি টেকসই বলা হলেও দীর্ঘমেয়াদে কী হবে তা বলা সম্ভব নয়।'

বারির সরফ উদ্দিন জানান, বারি আম-৪, কাটি ও কলা জাতের আমও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদনে দ্বিতীয় ছিল হিমসাগর, সাড়ে ৪ লাখ টন। আম্রপালি ও হিমসাগরের পরের স্থানে আছে রুনিভাঙ্গা, অশ্বিনা ও ল্যাংড়া। কিন্তু, আম্রপালি বেশ কয়েক বছর ধরে উৎপাদনের শীর্ষে আছে।

বর্তমানে বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

গবেষকদের মতে, দেশে ৭২টিরও বেশি জাতের আম আছে। যার প্রায় অর্ধেকই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, আম্রপালি আম রপ্তানি প্রতিবছর বাড়ছে। এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ১০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে, যার প্রায় ৮০ শতাংশ আম্রপালি জাতের।

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

1h ago