বিদেশিরা ৩৭ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন গত বছর

রেমিট্যান্স
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা ২০২২ সালে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অনুমতি ছাড়া অনেক বিদেশি এ দেশে কর্মরত থাকায় এই পরিমাণ আরও বেশি হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থাটির উদ্যোগ গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (কেএনওএমএডি) নতুন হিসাবে দেখা গেছে, এর আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স যাওয়া ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

বৈধ পথে পাঠানো রেমিট্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স গিয়েছে ১০ কোটি ডলার।

স্থানীয় বিশ্লেষকরা একমত যে, দেশের বাইরে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কেএনওএমএডির প্রতিবেদনের তুলনায় অনেক বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে দেশের বাইরে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কেএনওএমএডির প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় অন্তত ২০ গুণ বেশি হতে পারে।

তিনি বলেন, 'অনেক ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রীলংকান ও কিছু চীনা অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশে কাজ করছেন। বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে না পারায় তারা অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠান।'

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। কারণ, পরিসংখ্যান সমন্বিতভাবে প্রকাশ করা হয় না।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০২১-২২ অর্থবছরে ওয়ার্ক পারমিটের ১৫ হাজার ১২৮ আবেদন অনুমোদন দেয়। এটি আগের বছরের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।

আবেদনকারীরা এসেছেন ১০৬টি দেশ থেকে। বিডা নিবন্ধিত শিল্প প্রকল্প, বাণিজ্যিক কার্যালয় ও অন্যান্য সংস্থায় নিযুক্ত বিদেশিদের জন্য এই অনুমতি দেওয়া হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, ২০২০ সালে দেশে কর্মরত বিদেশিরা প্রতি বছর আনুমানিক ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পাচার করেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে অর্থ দেশের বাইরে যাওয়ার প্রকৃত চিত্রের তুলনায় কেএনওএমএডির তথ্য খুবই নগণ্য। বিশেষ করে, যদি অর্থ পাচারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়।'

টিআইবির গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বেসরকারি খাতে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশির অধিকাংশই বাধ্যতামূলক ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করছেন।'

তার মতে, 'পদ্ধতিগত ত্রুটি ও জটিলতা, সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সংশ্লিষ্টদের একটি অংশের সক্ষমতা ও ইচ্ছার অভাবের কারণে এই খাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।'

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মামুন রশীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধারণা করা হয় যে, বিদেশি কর্মীরা বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। সেই তুলনায় ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার খুবই কম বলে মনে হচ্ছে।'

'এ তথ্য এমন ইঙ্গিত দেয় যে অর্থ পাচার হয়ে যেতে পারে এবং পরিষেবা খাতের তুলনায় উত্পাদন খাতে অনুমতি ছাড়া কাজ করা বিদেশিদের সংখ্যা বেশি হতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে চীনে ৯৯ কোটি ২০ লাখ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার, মালয়েশিয়ায় ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার ও ভারতে ১২ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছে।

অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ছিল ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, থাইল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, মিয়ানমার, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বহির্মুখী রেমিট্যান্সের বিষয়ে কেএনওএমএডির তথ্যকে 'সত্যের ভুল ব্যাখ্যা' বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি মনে করেন, বাণিজ্যিক পেমেন্ট বা সার্ভিস পেমেন্টের ক্ষেত্রে যখনই বিধিনিষেধ থাকবে, তখনই এমনটি ঘটতে বাধ্য।

'এটি আন্ডারগ্রাউন্ড সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। দক্ষ কর্মীর চাহিদা থাকায় এর প্রসার ঘটছে,' যোগ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এই সাবেক কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বিদেশি কর্মীদের দেওয়া বেতন ও অন্যান্য সুবিধা চলতি হিসাব রূপান্তরযোগ্য পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ প্রায় ২ দশক আগে এই প্রক্রিয়ার অনুমোদন দিতে রাজি হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে ওয়ার্ক পারমিশন মেকানিজমের মাধ্যমে দেশের বাইরে রেমিট্যান্স পাঠানো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।'

বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতিকে চরম মূল্য দিতে হয়। আয়কর আকারে সরকার যে রাজস্ব পেত তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশ জানে না প্রকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ কত। কী পরিমাণ অর্থ দেশে আসছে এবং কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে যাচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুরের মতে, 'সঠিক তথ্য না থাকলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আমরা সঠিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবো না।'

কেএনওএমএডির তথ্য অনুসারে, গত বছর বাংলাদেশ ২ হাজার ১৫০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এটি আগের বছরের ২ হাজার ২২১ কোটি ডলারের তুলনায় তা ৩ শতাংশ কম।

ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব কোম্পানি বিদেশি কর্মী নিয়োগ করছে তাদের আইন মেনে কাজ করা উচিত।'

তিনি আরও বলেন, 'একই সঙ্গে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, যাতে বিদেশিরা অনুমতি নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ পান।'

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago