এমএফএসের মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ মাসে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

এমএফএস
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক লন্ড্রির দোকানে মোবাইল রিচার্জ পরিষেবা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করতে গ্রাহকরা ক্রমবর্ধমান হারে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) দিকে ঝুঁকছেন। এই রিচার্জ পদ্ধতির মাধ্যমে মোবাইল কোম্পানিগুলোর রাজস্ব প্রথমবারের মতো মাসে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এমএফএসের মাধ্যমে মোবাইল ফোন রিচার্জের হার গত এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা হয়েছে। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ।

৫ বছর আগে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে এমএফএস ও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডিজিটাল মাধ্যমে মোবাইল ফোন রিচার্জের পরিমাণও বেড়েছে।

এমএফএস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ কোটি এবং বিক্রিত সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৫০ লাখ। অনেকে আবার একাধিক অ্যাকাউন্ট ও সিম ব্যবহার করেন।

বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ, এটি এমএফএসের মাধ্যমে রিচার্জ করা টক টাইম ও ইন্টারনেট ডেটা বিক্রি থেকে পাওয়া আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।

গত এপ্রিলে গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা ব্যালেন্স রিচার্জের ৫৯ শতাংশ সরাসরি এজেন্টদের মাধ্যমে এবং বাকিটা এমএফএস নেটওয়ার্ক এবং ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেরেছেন।

এই প্রতিষ্ঠানের মোট রিচার্জের ২৩ শতাংশ বিকাশ থেকে, ৪ শতাংশ নগদ ও ১ শতাংশ রকেট থেকে এসেছে।

মোবাইল টক টাইম ও ইন্টারনেটের ডেটা কিনতে পুরোপুরিভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রিফাত জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে নেই শেষ কবে ফোন রিচার্জ করতে দোকানে গিয়েছিলাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি। অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকলে স্বামীর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি।'

রবি-আজিয়াটার মোট রিচার্জের ৪৫ শতাংশ আসে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় রিচার্জ থেকে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অপারেটরটির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ইঙ্গিত।'

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল রিচার্জ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে, করোনা মহামারির কারণে গ্রাহকরা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

শাহেদ আলম বলেন, 'বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা মোবাইল ব্যালেন্স রিচার্জের জন্য ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে দেখছি।'

ব্যালেন্স রিচার্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে বিকাশ সবচেয়ে পছন্দের প্ল্যাটফর্ম।

দেশের শীর্ষ এমএফএস প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এয়ারটেল, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ৭ কোটিরও বেশি গ্রাহক ব্যালেন্স রিচার্জ করেছেন।

বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোবাইল ফোনের সুবিধাগুলো পুরোপুরি পেতে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ জরুরি। প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ব্যালেন্স রিচার্জের সুযোগ পাওয়া দরকার।'

বিকাশ তার ব্যবহারকারীদের ব্যালেন্স রিচার্জ, টক টাইম ও ইন্টারনেট ডেটা কেনার সুযোগ দেয়। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের জন্য অটো রিচার্জ ফিচার চালু করেছে।

শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আরও বলেন, 'বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যালেন্স রিচার্জ হয়ে যায়।'

ডিজিটাল রিচার্জের জনপ্রিয়তা এজেন্টদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা।

১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিচার্জ এজেন্ট হিসেবে কাজ করা হবিগঞ্জের মোহাম্মদ আলম গ্রাহকদের কাছে টক টাইম, ইন্টারনেট ডেটা ও কার্ড বিক্রি করে আসছেন।

এক সময় তিনি ফোন গ্রাহকদের পরিষেবা, মোবাইল ফোন রিচার্জ ও কার্ড-সিম বিক্রি করে পরিবারের খরচ যোগাতেন।

কিন্তু এক পর্যায়ে এমএফএসের মাধ্যমে রিচার্জ বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে তার আয় গড়ে ৮ হাজার টাকায় নেমে আসে।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই পরিমাণ টাকা দিয়ে পরিবার চালানো অসম্ভব।'

তিনি এখন ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ-আউট সেবা দিতে এমএফএস এজেন্ট হয়েছেন। আয় বাড়াতে মোবাইল ফোনের খুচরা যন্ত্রাংশ এবং খাবার ও কোমল পানীয় বিক্রি করছেন।

এজেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে অপারেটরদের কাছ থেকে প্রতি ১ হাজার টাকা রিচার্জের জন্য ২৭ টাকা ৫০ পয়সা পেয়ে আসছেন। বেশি বিক্রি করলে কমিশন ১২০ টাকা পর্যন্ত হয়।

২ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই হার অপরিবর্তিত থাকায় অনেক এজেন্ট কমিশন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। আয় বাড়াতে অনেক ফার্মেসি, লন্ড্রি ও মুদি দোকানও মোবাইল রিচার্জ সেবা দিচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Inflation 7% by next June: BB governor

Bangladesh Bank Governor Ahsan H Mansur yesterday said the interim government has set a target to reduce inflation to 7 percent by the end of next June and further below 5 percent in the next fiscal year..“We have reviewed many countries, including the US, the UK, European Union or Thailan

16m ago