ট্যানারি: ৫৬৫ কোটি টাকার সিইটিপি ভাঙতে হবে, নতুন স্থাপনে দরকার ১০০০ কোটি

সাভার ট্যানারি
সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে (এসটিআইই) বহুল আলোচিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) নির্মাণে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ ও প্রায় এক দশক অপেক্ষা করেও এখনো এর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।

এখন এটির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন। কারণ, বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই ট্যানারির সিইটিপি অসম্পূর্ণ অবস্থায় হস্তান্তর করে গেছে।

এই প্রয়োজনীয় কাজের খরচ কে ব্যয় বহন করবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকার এটি পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে আগ্রহী নয়। ট্যানারির মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, অর্থ যোগান দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।

পুরোপুরি কার্যকর সিইটিপি না থাকলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাবে না। চামড়াখাতে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে বা ব্র্যান্ডগুলোকে আকৃষ্ট করতে এই সনদের প্রয়োজন।

অর্থাৎ, দেশ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত থাকবে। কেননা, স্থানীয় ট্যানারিগুলো কমপ্লায়েন্সের অভাবে প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়ার দাম বেশি পায় না। তারা দেশি চামড়ার পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারে না।

এটি দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কাঁচামাল হিসেবে চামড়া পুরোপুরি স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এটি এমন কয়েকটি পণ্যের একটি যা রপ্তানিকারকদের প্রায় শতভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ দেয়।

যথাযথ সিইটিপির অভাবের সাভার ট্যানারি শিল্পের চারপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

কঠিন-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা কাজ করছে না। কোরবানি ঈদে সংগৃহীত সব কাঁচা চামড়া পরিশোধন করার ক্ষমতা প্ল্যান্টটির নেই। দেশের বার্ষিক পশুর চামড়ার প্রায় অর্ধেক এসময় পাওয়া যায়।

ফলে সিইটিপির ট্যাংক উপচে অপরিশোধিত পানি ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। অথচ, এই সিইটিপি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫৬৫ কোটি টাকা।

বর্তমানে সিইটিপি ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে। কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ঘনমিটারে।

ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানির (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিইটিপি পুরোপুরি চালু করতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'সিইটিপিটি সংস্কার বা প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। কারণ, ২০২১ সালে জুলাইয়ে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অসম্পূর্ণ প্ল্যান্ট ডিটিআইইডব্লিউটিপিসির কাছে হস্তান্তর করে গেছে।'

'সিইটিপি বর্তমানে আংশিকভাবে চলছে। এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার জন্য এর সংস্কার প্রয়োজন,' যোগ করেন মুশতাক আহমেদ।

বর্তমানে ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি সাভার ট্যানারি এস্টেটের ভেতরে ১৬২টি ট্যানারির মধ্যে ১৪২টি থেকে মাসে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করে। এর মাসিক খরচ ২ কোটি টাকার বেশি।

মুশতাক আহমেদের মতে, ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য ট্যানারি মালিক। এই সংস্থাটির কাছে তাদের ৫ কোটি টাকা আমানত হিসেবে আছে। তবে সিইটিপি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের জন্য এই পরিমাণ অর্থ পর্যাপ্ত নয়।

সিইটিপির আংশিক পরিচালনার কারণে, সরকার সাভার ট্যানারিতে বেসরকারি ইটিপিগুলোকে অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে।

২টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এর জন্য ডিটিআইইডব্লিউটিপিসির কাছে আবেদন করেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু স্থানীয় ট্যানারি মালিকদের এলডব্লিউজি সনদ নেই তাই তারা মানের কারণে উন্নত দেশের বাজারে চামড়া রপ্তানি করতে পারছেন না। তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।'

বর্তমানে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র কমপ্লায়েন্ট নয় এমন চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিশোধিত চামড়া কম দামে রপ্তানি করছে। এটি বৈশ্বিক বাজার মূল্যের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি কম।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাত থেকে আরও বেশি আয় করা সম্ভব।

শাহীন আহমেদ বলেন, 'সিইটিপি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে ট্যানারি মালিকদের এক হাজার কোটি টাকা খরচের সক্ষমতা নেই। আমরা সাভার ট্যানারিতে ইতোমধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি।'

সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর করতে সরকারের অনুদান প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'কাজটি শেষ করতে ৭ মাস সময় লাগবে।'

মুশতাক আহমেদের মতে, সিইটিপি নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি ও ইতালির একটি প্রতিষ্ঠান অডিট করেছে।

তিনি আরও বলেন, 'যদি তাদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে প্ল্যান্টটি পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয় তবে তারা প্রায় ১৫ বছর এটি চালানোর সুযোগ পাবে। কারণ তাদেরকে নিজস্ব অর্থে কাজটি করতে হবে।'

'তবে প্রক্রিয়াটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে,' যোগ করেন তিনি।

২০০৫ সালে জুতা, পোশাক ও পোশাক ব্র্যান্ড এবং চামড়া প্রস্তুতকারকদের যৌথ উদ্যোগে এলডব্লিউজি গঠিত হয়। আজ এটি চামড়াভিত্তিক শিল্পের বৈশ্বিক স্টেকহোল্ডার সংস্থায় পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি ৬০টি বেশি দেশে ২ হাজারের বেশি স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্ব করছে।

Comments

The Daily Star  | English
IMF team visit to review loan for Bangladesh

IMF offers extra $1b for reforms

The International Monetary Fund (IMF) has offered an additional $1 billion to Bangladesh but the government is pushing for at least $2 billion to implement the interim government’s reform agenda, narrow the deficit in the current account and shore up the dollar stockpile.

10h ago