যে কারণে ২ হাজার রুপির নোট তুলে নিচ্ছে ভারত

২ হাজার রুপির নোট বাতিল
২ হাজার রুপির নোট। ছবি: রয়টার্স

ভারতের সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের ২ হাজার রুপির নোট বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু, কেন এই নোট বাতিল করা হচ্ছে এবং দেশটির অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল ২০১৬ সালে বাজারে ছাড়া ২ হাজার রুপির নোট আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকে জমা বা অন্য নোটের সঙ্গে বিনিময় করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালে কালোটাকার লেনদেন বন্ধ করতে মোদি-সরকার ১ হাজার রুপির নোট বাতিল করেছিল। প্রায় ৭ বছর পর আবারও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এবার তা বাতিলের জন্য বেশ খানিকটা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ১ হাজার রুপির নোট বাতিলের ঘোষণার পর যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, এবার তা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কেন তুলে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার রুপির নোট

২০১৬ সালে যখন মোদি-সরকার দেশে ২ হাজার রুপির নোট চালু করে, তখন আশা করা হয়েছিল এর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।

তবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সব সময়ই বলে এসেছে যে, বাজারে উচ্চ মূল্যমানের নোটের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। গত ৪ বছর ধরে দেশটি ২ হাজার রুপির নোট ছাপানো বন্ধ রেখেছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দামি মুদ্রাগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, 'লেনদেনের ক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের নোটগুলো কম ব্যবহৃত হয়।'

এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত

২ হাজার রুপির নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যদিও এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সামনে রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচন থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় দেশটিতে নগদ লেনদেন বেড়ে যায়।

মুম্বাইভিত্তিক আর্থিক সংস্থা এলঅ্যান্ডটি ফাইন্যান্স হোল্ডিংসের গ্রুপ চিফ ইকোনমিস্ট রেগে নিতসুরে রয়টার্সকে বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে।'

'যারা উচ্চ মূল্যমানের নোট জমিয়ে রেখেছেন তারা ঝামেলায় পড়বেন,' যোগ করেন তিনি।

অর্থনীতিতে প্রভাব

বর্তমানে ভারতের বাজারে ৩ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন রুপি বা ৪৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২ হাজার রুপির নোট আছে, যা মোট মুদ্রাবাজারের ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

রেগে নিতসুরে মনে করেন, বাজার থেকে ২ হাজার রুপির নোট সরিয়ে নিলে দেশটির অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। 'কেননা, বাজারে এর সমমানের মুদ্রা প্রচুর পরিমাণে আছে। এ ছাড়াও, গত ৬-৭ বছরে ডিজিটাল লেনদেন ও ই-কর্মাসের পরিধি অনেক বেড়েছে।'

গবেষণা সংস্থা কুয়ান্টইকো রিসার্চের অর্থনীতিবিদ যুবিকা সিনঘাল রয়টার্সকে জানান, ২ হাজার রুপির নোট তুলে নেওয়া হলে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কৃষি ও নির্মাণ শিল্পের মতো খাতে নগদ লেনদেন বেশি হওয়ায় সেখানে স্বল্প সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে।

ব্যাংকিংখাতে প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২ হাজার রুপির নোট ব্যাংকে জমা বা অন্য নোটের সঙ্গে বিনিময় করতে বলায় ব্যাংক জামানত বাড়বে।

এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো যখন ভারতের ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে।

রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ লিমিটেডের গ্রুপ হেড কার্তিক শ্রীনিভাসান জানান, ব্যাংকগুলো জামানত সংকটে ভুগছে। তার মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সেই সংকট ঘোচাবে। ব্যাংকে তারল্যের সরবরাহ বাড়বে।

মুম্বাইভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইমকে গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসের অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরা বলেন, '২ হাজার রুপির নোটগুলোর নগদ লেনদেন কমে গিয়ে তা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসবে। এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য সরবরাহে সহায়তা করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

3h ago