মালয়েশিয়ায় প্রতারণার শিকার ৭ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে বকেয়া বেতন দেওয়ার নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় প্রতারণার শিকার ৭ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মী পাচ্ছেন বকেয়া বেতন। পেনিনসুলার লেবার ডিপার্টমেন্ট (জেকেটিএসএম) জোহরের পেনজেরাংয়ে ৭৩৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের নিয়োগকর্তাকে ১,০৩৫,৫৫৭.৫০ মিলিয়ন রিঙ্গিত বকেয়া বেতন পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে।

চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে অমানবিক পরিস্থিতিতে ফেলে সেই দেশের পেনজেরাংয়ের একটি কোম্পানি। মুলিয়াঅন এনার্জি এসডিএন বিএইচডি নামের ওই কোম্পানিটি ভুয়া চাকরির প্রস্তাব দিয়ে কর্মী নিয়েছে। পরে মালয়েশিয়ার ওই অঞ্চলের শ্রম আদালতে অভিযোগ করলে অর্ধেক বেতন পরিশোধের শর্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়েছে কোম্পানিটি।

আজ বৃহস্পতিবার মেট্রো হারিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে শ্রম আদালত এই নির্দেশনা দেন।

গত বছরের অক্টোবর থেকে বেকার দিনযাপন করা এই কর্মীরা বাকি অর্ধেক বেতন কবে নাগাদ পাবেন, সেই নিশ্চয়তা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মালয়েশিয়ার শ্রম আদালত জানিয়েছে, জোহর রাজ্যে সাত শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে চাকরি দেওয়ার নামে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ওই কোম্পানি। পরে আদালতে অভিযোগ করা হলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ওই কর্মীদের বকেয়া বেতনের অর্ধেক (প্রায় ১০ লাখ রিঙ্গিত বা ৩ লাখ মার্কিন ডলার) পরিশোধ করতে রাজি হয় মুলিয়াঅন এনার্জি এসডিএন বিএইচডি।

মালয়েশিয়ায় চাকরি না পাওয়া বাংলাদেশি ওই কর্মীরা জানান, তাদের গ্রুপটি গত ডিসেম্বর মাসে নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থানায় অভিযোগ জানালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তাদের মধ্যে ১৭১ জনের একটি দল পেনজেরাংয়ের একটি পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ জানাতে জড়ো হন। পরে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের সহায়তায় তারা শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।

কর্মীরা জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ওই দেশে যাওয়ার পর থেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন তারা।আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তিকালে প্রতিষ্ঠানটি অর্ধেক বেতন পরিশোধ করতে রাজি হয়েছে। তবে বাকি বেতনের বিষয়ে ধোঁয়াশায় আছেন তারা।

জোহর বাহরু শ্রম আদালত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৭৩৩ জন অভিযোগকারীকে মোট ১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত বেতন দাবির ৫০ শতাংশ পরিশোধের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ (নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারী)। বকেয়া বেতন পরিশোধের পাশাপাশি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ভুক্তভোগীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে আদালতকে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া এসব কর্মী যে গুরুতর আবাসন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে তাদের একটি নতুন হোস্টেলে স্থানান্তর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, 'গত অক্টোবরে আমরা মালয়েশিয়ায় আসি। কোম্পানির লোক আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়। তারপর থেকে আমাদের কোনো কাজ নেই। না খেয়ে ছিলাম বেশ কয়েক দিন। দেশ থেকে টাকা এনে কোনোমতে চলছিলাম। কাগজপত্র না থাকায় নভেম্বরের মাঝামাঝি আমাদের ১৭১ জনকে আটক করে পুলিশ। তারা নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থানায় যাচ্ছিলেন। পথে পুলিশ তাদের কাগজপত্র না পেয়ে আটক করে নিয়ে যায়। ১৪ দিন তারা জেলে ছিলেন। এসব বিষয়ে হাইকমিশনকে তারা জানাতে পারেনি। কারণ তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগীরা শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।'

কর্মীরা আরও বলেন, 'এতদিন দুর্বিষহ অবস্থায় থাকার পর আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি আদৌ কোনো টাকা পাব কি না। প্রতিশ্রুত অর্থ হাতে পাওয়ার পর আমরা বিশ্বাস করতে পারব।'

বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিয়ে সেই দেশে কাজ করা ব্রিটিশ শ্রম অধিকার কর্মী এন্ডি হল শ্রম আদালতের রায় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, 'এই হাইপ্রোফাইল মামলাটির জন্য মালয়েশিয়ার বিচার ও আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থার মধ্যে একটি প্রতিরোধমূলক নিষ্পত্তি প্রয়োজন। যেখানে সরকার এবং বিচার বিভাগ এই সংঘবদ্ধ অপরাধ সিন্ডিকেটকে দমন করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে মূলত আধুনিক দাসত্ব বা জোরপূর্বক শ্রমের মতো পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের পাচার করা হয়েছে। সরকারের সবশেষ যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা এই বিবৃতি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নয়। এটি একটি হতাশাজনক নিষ্পত্তি।'

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তাদের মন্ত্রণালয় মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে এবং বিদেশি শ্রমিক শোষণের সঙ্গে জড়িত কোনো পক্ষের সঙ্গে আপস করবে না। মানবপাচারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু আইনে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে তারা একমত পোষণ করেন।

এ ছাড়া বিদেশি কর্মী নিয়োগের নতুন আবেদন থেকে নিয়োগকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। তাদের অবশিষ্ট অভিবাসী কর্মী কোটা এবং অনুমোদনের চিঠি বাতিল করা হবে। বিদেশি কর্মীদের বিদ্যমান ওয়ার্ক পারমিট নবায়নে তাদের (নিয়োগ কর্তা) বাধা দেওয়া হবে।

মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কিয়ং বলেছেন, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে এমন কোনো দলের সঙ্গে আপস করা হবে না। তার মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রী (আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার), দাতুক সেরি আজালিনা ওথমান সাইদ বলেছেন, প্রায় ২ হাজার ৫০০ বিদেশি কর্মী রয়েছে যারা তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে পেনজেরাংয়ে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh foreign policy

Assad’s ouster and the ever-changing world for Bangladesh

Do we have the expertise to tackle the crises and exploit the opportunities in the evolving geopolitical scenario?

10h ago