মালয়েশিয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বাংলাদেশির মরদেহ দাফন, পরিবার-প্রবাসীদের ক্ষোভ
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ শাওনকে (৩০) বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার অভিযোগ উঠেছে। অথচ তার ছিল বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও ভিসা।
বিষয়টি বাংলাদেশ মিশনকে জানানোর পরও শাওনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করায় ক্ষুব্ধ তার পরিবার ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রবাসীদের সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরের হাটচান্দিনা গ্রামের মোহাম্মদ আবু তাহেরের ছেলে শাওন ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যান। গত বছরের ২৭ আগস্ট কর্মরত প্রতিষ্ঠানের বাইরে একটি কাজ করতে গিয়ে ৫তলা ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ মার্চ শাওনের মৃত্যু হয় এবং ১৫ এপ্রিল বেওয়ারিশ হিসেবে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
হাসপাতালে ৮১ হাজার ৭৪৩ রিঙ্গিত বিলের মধ্যে ২২ হাজার রিঙ্গিত বিমা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং ৯ হাজার রিঙ্গিত প্রবাসীদের সহযোগিতায় পরিশোধ করা হয়।
অন্য জায়গার কাজ করতে গিয়ে আহত হওয়ায় এর দায় নেয়নি শাওনকে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানের মালিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, 'মরদেহ দাফনের আগেই বাংলাদেশ মিশনের কল্যাণ সহকারীর হোয়াটসঅ্যাপে শাওনের সব তথ্য পাঠানো হয়েছিল।'
'বাংলাদেশ হাইকমিশনে জানানোর পরও কোনো ধরনের সহায়তা করেনি' অভিযোগ তুলে শাওনের মা শিরিন বেগম বলেন, 'আমার ছেলের পাসপোর্ট-ভিসা থাকার পরও কেন তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় দাফন করা হলো। মা হয়ে শেষবারের মতো ছেলের মুখটাও দেখতে পেলাম না।'
৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শাওন। শাওনের বড় ভাই মোহাম্মদ শামীম বলেন, 'আমার ভাইয়ের পরিচয় জানার পরও তার মরদেহ দেশে না পাঠিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলো। আমি এর সঠিক বিচার চাই।'
মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, মালয়েশিয়ার হাসপাতালে কোনো বিদেশি নাগরিকের চিকিৎসাবস্থায় মৃত্যু হলে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত মরদেহ হস্তান্তর করা হয় না। হাসপাতালের বকেয়া বিল এবং পরিচয় থাকা সত্ত্বেও শাওনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলো কেন?
তাদের মাধ্যমে জানা যায়, শাওন মালয়েশিয়া বিএনপির সক্রিয় কর্মী এবং মালয়েশিয়া জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) এএসএম জাহিদুর রহমানের জানান, শাওনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে মিশনের আইন উপদেষ্টাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক
Comments