মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশি খাবার

মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী 'অষ্টম সেলাঙ্গর ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো'। আন্তর্জাতিক এ মেলায় বিশ্বের ২৩টি দেশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জন্য বিনা মূল্যে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশটির সেলাঙ্গর রাজ্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত বিশ্বের ব্র্যান্ড ও শিল্প উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের অংশ এ মেলা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেএলসিসি কনভেনশন সেন্টারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য সম্মেলন ও মেলার উদ্বোধন করেন সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্রাউন প্রিন্স টুংকু আমির শাহ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সেলাঙ্গর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইবি দাতো শ্রী আমিরুদিন বিন শারি বলেন, 'এসআইবিএস ২০২২ এর মাধ্যমে সেলাঙ্গর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুন-উদ্ভাবনে সহায়তা করার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই সুবিধা শুধুমাত্র সেলাঙ্গরের জন্য নয়, মালয়েশিয়া ও আসিয়ান বন্ধুদের জন্যও।'

'বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে' বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ ব্যাচেলর পয়েন্ট, পিঠা ঘর ও আলো ছায়া ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার প্রদর্শন করছে। পাশাপাশি 'প্রাণ'র খাদ্য ও পানীয় এবং মন্নু সিরামিক টেবিলওয়্যারের (ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, বাটি) পণ্যও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
মেলায় অংশ নেওয়া দেশগুলোর কূটনৈতিক, শিল্পোদ্যোক্তা, বিনোয়োগকারী ও প্রবাসীসহ অনেক মালয়েশিয়ান দর্শনার্থী 'বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন' ঘুরে দেখেন।
এ ছাড়াও উদ্বোধনী দিনে প্যাভিলিয়ন এসেছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর কনসুলার জিএম রাসেল রানা ও প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএমসিসিআই) পরিচালক মাহবুব আলম।
সে সময় প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, 'প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও এশিয়ার অন্য দেশের অভিবাসীদের কাছেও আমাদের খাদ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে। আশা করা যায় এ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বাজার আরও বাড়বে।'
উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশি খাবারের ডেমোনস্ট্রেশন ও গ্যাস্ট্রোনমি মাস্টার ক্লাস করেন মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলিনারির (রন্ধনশিল্প) বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বৃষ্টি খাতুন এবং বাংলাদেশ থেকে আসা দিল আফরোজ নাহার।
তারা বাঙালি খাবারের রন্ধন প্রণালি ও গুণাগুণ সম্পর্কে নানান তথ্য দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরেন।
দিল আফরোজ নাহার বলেন, 'বাঙালি চিরায়ত আতিথেয়তার অন্যতম প্রধান উপকরণ ঐতিহ্যবাহী খাবার অনেক আগে থেকেই প্রসিদ্ধ। কিন্তু, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপনাটা সেভাবে ছিল না। এ মেলার মাধ্যমে আমরা সে কাজটি করতে পারছি।'
বৃষ্টি খাতুন বলেন, 'এই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি ভিন্ন পরিচয় আজ উপস্থাপন করতে পেরেছি বলে অনেক ভালো লাগছে।'

আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যেই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক শীর্ষ সম্মেলন ও মেলার এবারের আসরে ২৪টি দেশের ৬২৩টি কোম্পানির ৯০৬টি বুথ রয়েছে, যা এর আগের মেলাগুলোর তুলনায় বেশি।
আয়োজক সেলাঙ্গ রাজ্য সরকার আশা করছে, প্রায় ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী এবারের মেলা পরিদর্শন করবে।
করোনা মহামারির পর এই মেলা দিয়ে ১০ বিলিয়ন রিঙ্গিত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ লক্ষ্য অর্জন করার প্রত্যাশার কথা জানান রাজ্য পরিষদের কাউন্সেলর ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড দাতুক টেং চ্যাং খিম।
লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক
Comments