ওয়ান ডিশ পার্টি থেকে নেটওয়ার্কিং নাইট

ছবি: নাদিয়া রহমান

দেশে যেমন এই সময়ে ফাইনাল পরীক্ষা চলতো, যুক্তরাষ্ট্রেও এই সময়ে সেমিস্টার প্রায় শেষের দিকে। কারও কয়েক ঘণ্টার কাগজে-কলমে পরীক্ষা, কারও গবেষণা প্রবন্ধ জমা দেওয়ার সময়, আবার কারও সর্বশেষ গবেষণা উপস্থাপন। চার মাসব্যাপী সেমিস্টারের শেষের সময়টা এখানকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবারই খুব ব্যস্ত কাটে। 

এমনও হয়, হোয়াইট বোর্ডের পুরোটাই কর্মপরিকল্পনা লিখে ভরাট হয়ে গেলেও অযাচিতভাবে নতুন সব কাজ চলে আসে। তাই খুব সহজভাবে এই সময়টায় আপনাকে সব ডেডলাইনের একটা চাপের সম্মুখীন হতেই হবে। অনেক সহপাঠীকে দেখেছি একঘেয়ে হয়ে পড়েন। এখানকার অনেক শিক্ষার্থীকেও দেখেছি, কয়টা মাসের জন্য বিরতি নিতে। 

আমরা যারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং পড়ার পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে গিয়ে পড়াতেও হয়, তাদের এই বিরতি নেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের একঘেয়ে থেকে বিরতি নেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এখানকার 'ওয়ান ডিশ পার্টি' কিংবা 'পট লাক' আয়োজন করে ফেলা। 'পট লাক' মূলত এ কারণে বলা হয়, বিশাল এক খাবারের তালিকার মধ্য থেকে যার ভাগ্যে যেটা পরবে, তাকে সেটাই রান্না করে নিয়ে আসতে হবে। তবে আইটেম বদলে নেওয়ারও সুযোগ আছে। 

কোনো একটা উইকেন্ড বা ছুটির দিনক্ষণ ঠিক করে সে অনুযায়ী বাজার করে রান্নার জোগাড়যন্ত্র করা। এই ওয়ান ডিশ আয়োজন যে শুধু আমাদের একঘেয়েমি দূর করে তা নয়, সব থেকে ভালো লাগে- বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। একেক দেশের খাবার, রসনা-বিলাসের রীতিনীতি নিয়েও কথা হয়। যেমন- গত আয়োজনেই ইরানের পিএইচডির শিক্ষার্থী এলহামের সঙ্গে যখন গল্প হচ্ছিল, দেখলাম বাংলাদেশের কিছু ডেজার্ট বা মিষ্টি সেখানেও আছে। তবে অবশ্যই ভিন্ন নামে। 

খাবার বা এই রসনা-বিলাস, বিভিন্ন মশলার মিশ্রণ আসলে একেকটা দেশের সংস্কৃতি আর রুচির সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত। আমরা হয়ত বিশ্বায়নের যুগে ঢাকা শহরে বসেই হরেক রকমের খাবার পেয়ে যাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে, যেখানে বহু জাতির মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, সেখানে নিজেদের খাবারের স্বকীয়তাটা বোঝা যায় খুব সহজেই। 

এই এক 'পট লাক'র মাধ্যমেই চেনাজানা হয়েছে অনেক দেশের শিক্ষার্থীর সঙ্গে। কয়েকজনের সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছে। দিনের কাজ আর ক্লান্তি শেষে কফি হাতে কোনো এক সুবিশাল গাছের নিচে বসে কিছুক্ষণ গল্প করা বা কখনো প্রয়োজনে কোনো কোনো আবদারও রাখা হয়েছে এই ষোল মাসে। 

শুধু আমাদের নিজেদের 'ওয়ান ডিশ' আয়োজনই নয়, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অধ্যাপকেরাও সেমিস্টারের প্রায় শেষ সময়টাতে আয়োজন করেন এই 'পট লাক'র। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, বৃহৎ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকা থেকে আসা অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দের বা স্থানীয় কোনো খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। 

আর সব শেষে থাকে 'নেটওয়ার্কিং নাইট'। নাম দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয় এখানে রসনা-বিলাস, খাবারের পাশাপাশি বন্ধুত্বটা যাতে গড়ে ওঠে তাই এই আয়োজন। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন জায়গায় এর আয়োজন করে থাকে। 'ওয়ান ডিশ' বা 'পট লাক'র থেকে এই 'নেটওয়ার্কিং নাইট' কিছুটা ভিন্ন, কেননা এখানে শিক্ষার্থীদের খাবার তৈরি করে নিতে যেতে হয় না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় বা ডাইভারসিটি এবং ইনক্লুশন অফিসগুলোই খাবার এবং বিভিন্ন খেলাধুলা, আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসের আয়োজন করে। 

গত বছরই রেড রিভার গর্জে যাওয়া হয়েছিল হাইকিংয়ে। এখনো বন্ধুত্ব আছে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। 'ফল কালার' বা শরতের রঙ্গিন পাতাদের মৌসুমে আমরা হাইকিং করে বেরিয়েছিলাম পড়ন্ত বিকেলের আগ পর্যন্ত। আর রাতে কাঠের তৈরি এক রিসোর্টে সবাই মিলে কুমড়ো কেটে হ্যালোইনের জন্য সাজিয়েছিলাম। আবার কখনো রোলার স্কেটিং, আইস স্কেটিং করা হয়েছে সবাই মিলে। 

কিছুদিন পরেই আবার আসছে তুষারের সময়, স্কেটিং করার পরিকল্পনাও চলছে। এই 'ওয়ান ডিশ' থেকে যদি কয়েকজন ভালো বন্ধু মিলে যায়, পড়ালেখার ঝক্কিটাও অনেক কম মনে হয়। 

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

1h ago