যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা

পাঠ্যবইয়ের বাইরে

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: পাঠ্যবইয়ের বাইরে
ছবি: নাদিয়া রহমান

সপ্তাহজুড়ে কতশত কাজ থাকে প্রবাস জীবনে। একইসঙ্গে পড়াশোনা, নিজের গবেষণা এবং শিক্ষার্থীদের পড়ানো। এই পাঁচ দিনের পরেও থাকে ঘরদোর গুছিয়ে বাজারসদাই এবং রান্নার কাজ। দেশে থাকার সময় এসব কাজের কথা মাথায় আসতো, মনে হতো কীভাবে সম্ভব হবে? 

এতশত কাজের পরও বরং যুক্তরাষ্ট্রে এসে কিছুটা সময় পাচ্ছি নিজের পছন্দের কাজগুলো করার জন্য। নিজের অভিজ্ঞতা বলে, এখানে আসবার পর সাহিত্য, বই পড়া, বিভিন্ন গবেষণা আর্টিকেল পড়া হয়েছে অনেক বেশি। 

এখানকার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে খুব কম। বেশিরভাগ সময়েই জিমনেশিয়াম, বিভিন্ন স্পোর্টস আর আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসেই দিনের কিছুটা সময় ব্যয় করে। 

পারিপার্শ্বিক কারণে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে এর কিছুটা প্রভাব তো আছেই। যখনই সময় পাওয়া যায়, লাইব্রেরিতে যাওয়া বা বিভিন্ন সাহিত্যের পাতায় সময় ব্যয় করা হয় ছুটির দিনগুলোতে। এখানে আসবার কয়েক মাসের মধ্যে পড়া হয়েছে বেশ কয়েকখানা বই। নিজের সহপাঠীদের দেখেছি, কয়েকজন মিলে কোনো খোলা জায়গায় সাহিত্য বিষয়ে, বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা করছেন। 

একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি কিছুটা সময় তারা বরাদ্দ রাখছে ইতিহাস, সাহিত্য, বিভিন্ন চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এখানে বিভিন্ন গ্রুপ পাওয়া যায়। কোনটা হয়তো চলচ্চিত্রের, কোনোটা গবেষণাসহ বিভিন্ন কনফারেন্স, সিম্পোজিয়ামের, আবার কোনো গ্রুপ বিভিন্ন স্পোর্টস নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পাওয়া যাবে আলোচনার এমন বিভিন্ন গ্রুপ। যে কেউ চাইলে এসব আলোচনায় যুক্ত থাকতে পারেন। 

অনেক সহপাঠীকে দেখেছি গাছের পরিচর্যা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিতে। একটা ক্ষুদ্র গাছকে কতভাবে যত্নসহকারে যে সাজানো যায় সেটা আমার সহপাঠীদেরকে না দেখলে মনে করতাম, এসব শুধু বাণিজ্যিক দোকানপাটেই হয়। যারা বৃক্ষপ্রেমী তাদের প্রত্যকেরই কমবেশি বাগান আছে। হয়তো ইনডোর কিংবা আউটডোর। আবহাওয়া যেহেতু এখানে বেশিরভাগ সময়েই শীতপ্রধান তাই মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে গাছের পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়। ক্লাসে যাবার আগে কিংবা ক্লাস থেকে ফিরে, প্রত্যেক বাগানের মালিককেই দেখেছি সময় করে যত্ন নিতে। ব্যস্ততার মাঝে এই রুটিনের কোনো হেরফের হয় না। 

অনেকেই আবার নিজ বাগানের সবজি দিয়ে রসনাবিলাস করতে পছন্দ করেন। আমি বরাবরই রন্ধনশিল্প থেকে বেশ দূরে। সময় যেটুকু মেলে সেটা ব্যয় করি ডর্মের পাশে বাগানে হাঁটবার জন্য, নয়তো বই পড়ায়। কিন্তু আমার অনেক সহপাঠীসহ দেশের অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখেছি, নিজ দেশের খাবার, বিভিন্ন মশলার প্রয়োগ এখনো ঠিকঠাক রাখতে। 

এ ছাড়া বিভিন্ন স্বাদের নানান নতুন খাবারের রেসিপি দেখে নিজেরাই রান্না করবার চেষ্টা করছে। কত সুনিপুণভাবে এই শিক্ষার্থীরা ল্যাবরেটরিতে দিনভর কাজের পাশাপাশি রন্ধনশীল্পেও নিজেদের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে! ছুটির দিন বা বিভিন্ন আড্ডার আসরে একেবারে দেশি খাবারের মশলার ঘ্রাণ অনেকটা আপন মনে হয়। 

আমার আন্তর্জাতিক সহপাঠীরা আবার খেলাধুলা, জিমনেশিয়ামের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিসে বেশ আগ্রহী। এখানে আসবার প্রথম দিকে অবাক হতাম ভেবে, কীভাবে এরা সময় করে নিচ্ছে! পরে বুঝতে শিখেছি, সারাদিন পাঠ্যবইয়ের মধ্যে থাকলে নিজের অনেক শখ, মানসিক সুস্থতাই যেন মাটি! তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এখানে ক্লাস শেষে গন্তব্য শুরু করে বিভিন্ন স্পোর্টস, সাঁতার কিংবা জিমনেশিয়ামে। 

প্রায়শই ভাবি, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে হল ব্যবস্থা; আবাসন ব্যবস্থার তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, কিংবা সার্বিক যে অবকাঠামো সেখানে আসলে এতসব সুবিধা অনুপস্থিত। তারপরেও যতটুকু সুযোগ আছে, দেশে শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেন। এমনকি মার্কিন মুল্লুকে এসেও ভালো লাগে যখন দেখা যায়, নিজ দেশের একজন শিক্ষার্থী এতসব জাতির মানুষের ভিড়ে সমান তালে নিজেকে, নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে চলছে!

নাদিয়া রহমান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago