৬ দিনে ৬০ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা
আগামী ৭ আগস্ট থকে শুরু করে ছয় দিনে ৬০ লাখ মানুষকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, মূলত গ্রামের প্রবীণদের টিকা দিতে এটি একটি বিশেষ কর্মসূচী।
তারা জানান, দেশের ১৫ হাজার ২৮৭টিরও বেশি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও যেন টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, সেজন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এই কর্মসূচী সমন্বয় করবেন।
এই ছয় দিনে নিয়মিত টিকা কেন্দ্রগুলোতে কেবলমাত্র তারাই টিকা পাবেন যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রবীণদের টিকা দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ সরকারের কাছে এর যথাযথ ডেটাবেস নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টিকা পাওয়া গেলে আমরা মাসে এক কোটি বা তারও বেশি মানুষকে টিকা দিতে পারব। অল্প সময়ের মধ্যে যত বেশি সম্ভব মানুষকে আমরা টিকা দেওয়ার চেষ্টা করব।'
টিকার দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে এনআইডি প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, 'কিন্তু যাদের এনআইডি নেই তারাও টিকা পাবে। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।'
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে প্রায় ১১ কোটি মানুষের এনআইডি আছে।
বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ১১৫ জনের এবং মারা গেছেন ২০ হাজার ৪৬৭ জন। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি।
দেশে এখন পর্যন্ত এক কোটি ১৮ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। যা জনসংখ্যার প্রায় চার শতাংশ। এবং তাদের মধ্যে মাত্র ৪৩ লাখ মানুষ টিকার দুটি ডোজ পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশকে টিকা দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, 'ছয় দিনে ৬০ লাখ ডোজ টিকা তাদের দেওয়া হবে যারা এখনও টিকা পাননি। তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজও একই পদ্ধতিতে দেওয়া হবে।'
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চল ও জেলা সদরে চীনের সিনোফার্ম এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেওয়া হবে।
সরকারের কাছে মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ এবং সিনোফার্মের ৫১ লাখ ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি স্থায়ী এবং দুটি অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র থাকবে। পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি টিকাদানকারী দল থাকবে। দলটি সপ্তাহে চার দিন মানুষকে টিকা দেবে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্ধারণ করে দেবেন কোন স্থানে তার এলাকার বাসিন্দাদের টিকা দেওয়া হবে।
যারা টিকা পাবেন তাদের একটি তালিকা করবেন কর্মকর্তারা এবং এই তালিকার তথ্য জাতীয় ডেটাবেসে আপডেট করে রাখা হবে।
চ্যালেঞ্জ অনেক
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকবেন।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'মন্ত্রণালয়গুলো বিজ্ঞপ্তি দেবে এবং প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) গণ প্রচারণা চালাবে।'
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, এই কর্মসূচী সফল করার চাবিকাঠি হচ্ছে সবার সম্পৃক্ততা।
তিনি বলেন, 'স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যেক গ্রামে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে মানুষ স্বেচ্ছায় টিকাকেন্দ্রে আসে।'
বয়স্কদের টিকা দেওয়া প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, 'তারা টিকার নিতে আসছেন কিনা তা দেখার জন্য কে আছে?'
তিনি জানান, এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচী শুরু করার আগে সরকারের উচিত ছিল কাদের আগে টিকা দেওয়া হবে তার একটি ডেটাবেস তৈরি করা।
Comments