দিনে ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা
চলমান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে গতি আনতে আগামী মাস থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ ডোজ করে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রেও গতি এসেছে।
আগামী বছরের এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ ৮০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতি মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'এখন পর্যন্ত আমাদের টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে এবং এটা যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে আমরা প্রতিদিন ১০ লাখ ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হব। আগামী এপ্রিলের মধ্যে আরও ৬ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে পারব বলে আশা করি।'
তিনি আরও বলেন, 'টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করতে সরকার ৯ কোটি সিরিঞ্জ কিনেছে, যা আগামী মাস থেকে দেশে আসতে শুরু করবে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় ৮ কোটি ৮২ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া, প্রায় ৪ কোটি ২ লাখ মানুষ অন্তত এক ডোজ ও প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন বলেও জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে।
এটি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা যদি আগামী ৬ মাসে ১৮ কোটি ডোজ টিকা দিতে পারি, তাহলে আরও ৯ কোটি মানুষ সম্পূর্ণ টিকা পাবে। সুতরাং, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে আমাদের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে।'
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে। সেগুলোর মধ্যে সিনোফার্মের সাড়ে ৭ কোটি এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রয়েছে।
এ ছাড়া, কোভ্যাক্স থেকে সাড়ে ১০ কোটি ডোজ সিনোফার্ম এবং সিনোভাক ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে একটি বৈশ্বিক সুবিধা হলো কোভ্যাক্স। চলতি বছর ৬ কোটি ৪ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১ কোটি ৬০ লাখ ফাইজার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কোভ্যাক্স থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। যদি সময়মত ভ্যাকসিন পাই, তাহলে টিকা দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারব।'
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুটি বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির পর আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন যে, প্রতিদিন ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব।
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পরিচালিত দুই দিনের টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন আমরা টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়াতে কাজ করছি। আমরা দিনে ৪ থেকে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছি এবং প্রতিদিন ১০ লাখ ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এ ছাড়া, প্রতিমাসে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনারও পরিকল্পনা আছে।'
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে বার বার ব্যাহত হয় গণটিকাদান কর্মসূচি।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে হঠাৎ করে ভ্যাকসিন সরবরাহ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি প্রায় এক মাসের জন্য স্থগিত হয়ে পড়ে।
এরপর জুন মাসে চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন কেনার পর টিকাদান কর্মসূচি আবারও কিছুটা গতি পায়।
আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য সরকার টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ইতোমধ্যে ১৮ বছরে নামিয়ে এনেছে। এ ছাড়া, সরকার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা পাঠাবে, এরপর শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে।'
গত মে মাসে দেশে প্রথমবারের মতো করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এরপর জুন ও জুলাই মাসে সেটা ধ্বংসাত্মক রূপ নেয়। তবে প্রায় মাস খানেক ধরে করোনাভাইরাসের শনাক্ত ও সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
Comments