ঢাকায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ, কমেছে খুলনায়
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজধানী ঢাকায় কমছে না মৃত্যু। একইসঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের।
গত ৮ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব করলে আগের পাঁচ দিনের তুলনায় ঢাকায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া গত ৩ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় ৮ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর আগের পাঁচ দিনে অর্থাৎ ৩ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৬৯ জন প্রাণ হারান।
চলতি বছরের মে মাসে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ আশঙ্কজনক হারে বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞরা নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেন। সুপারিশ তালিকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম ছিল। তবে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন আগেই লকডাউন ঘোষণা করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাত জনের শরীরে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলে জানা যায়, তারা কেউ সম্প্রতি ভারতে ভ্রমণ করেননি। এতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই জেলাগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
এরপর তিনটি ক্লাস্টারে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ এবং সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখা যায়। এর মধ্যে রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও খুলনার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনতি হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার। নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে কুষ্টিয়া ও সিলেটে।
জেলাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে ৩ আগস্ট থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনে ৩১ জন মারা গেছেন। এ সময় চার হাজার ৭৪৮টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ১২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৮ আগস্ট থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ২৬ দশমিক ০৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এই সময়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহে গত পাঁচ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও সংক্রমণ কমেছে সামান্য। গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের হার ছিল শতকরা ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৭ আগস্ট থেকে আগের পাঁচ দিনে শনাক্ত হয়েছিল ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মারা গেছেন ৩১ জন।
মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা। গত পাঁচ দিনে কুমিল্লায় মারা গেছেন ৮০ জন। তার আগের পাঁচ দিনে মৃত্যু ছিল শতকের ঘরে।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে বন্দর নগরীতে মারা গেছেন ৬২ জন। ৭ আগস্ট থেকে পূর্ববর্তী পাঁচ দিনে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কুষ্টিয়া জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এখনো দেখা যাচ্ছে, গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে ৩৮ জন করোনায় মারা গেছেন। ৭ আগস্ট পর্যন্ত আগের পাঁচ দিনে মৃতের সংখ্যা একজন বেশি ছিল।
জুলাই থেকে উত্তরবঙ্গে জেলা বগুড়া ও দক্ষিণবঙ্গে বরিশালে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। ৭ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ দিনের সংক্রমণের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। পরবর্তী পাঁচ দিনে সেটি কমে ২৮ দশমিক ০১ শতাংশে দাঁড়ায়। ১০ দিনে মারা গেছেন ৩২ জন। বগুড়ায় ১০ দিনে মারা গেছেন ৪০ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় ১০ দিনে শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ০৯ শতাংশ।
কুষ্টিয়া এবং সিলেট জেলায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কুষ্টিয়ায় গতকাল পর্যন্ত ১০ দিনে গড়ে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেটে গড়ে ৯ জন মারা গেছেন। এ সময় সংক্রমণের হার ছিল ৩০ শতাংশের উপরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনে সাতক্ষীরায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে পাঁচ দিনে এক হাজার ২৩১টি নমুনার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ২২৩ জন। পরবর্তী পাঁচ দিনে এক হাজার ৫৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
চলতি বছরের ৯ জুলাই খুলনা জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭ জন এবং একই দিনে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭১ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে খুলনা জেলায় মারা গেছেন ১২ জন। এ সময় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
রংপুরে গতকাল পর্যন্ত ১০ দিনে মারা গেছেন ৪১ জন। এ সময় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে কমে এসেছে রাজশাহীতে। ৩ আগস্ট থেকে পাঁচ দিনে তিন হাজার ৯০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরবর্তী পাঁচ দিনে চার হাজার ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় ৭৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে, মৃত্যু ও শনাক্তের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান সবার উপরে। গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে ঢাকা বিভাগে ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এখানে পাঁচ দিনে মারা গেছেন ২৯৮ জন। খুলনা বিভাগে পাঁচ দিনে ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, সিলেটে মারা গেছেন ৮৭ জন।
এর আগের পাঁচ দিনে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪২৩ জন। চট্টগ্রামে ৩২৬ জন। খুলনা বিভাগে ১৮৪, রাজশাহীতে ৭৬, সিলেট ও রংপুরে ৬৩, বরিশালে ৬১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম ১১ হাজার ৭৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গত মাসে তিন লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন। আগস্ট মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত এক লাখ ২৬ হাজার ৮৩৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ ছাড়াও, গতকাল শুক্রবার করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৯৭ জন মারা গেছেন এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৪৬৫ জন।
এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃত্যু ২৩ হাজার ৮১০ এবং শনাক্ত ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৩৩৩।
Comments