চলে গেলেন ‘ঘর মন জানালা’ লেখক দিলারা হাশেম
'ঘর মন জানালা'। মধ্য ষাটের দশকে প্রকাশিত এই একটি উপন্যাসই আলাদা করে জানান দিবে বাঙালি সমাজে সাহিত্য যাত্রায় কতোটা অগ্রবর্তী ছিলেন তিনি।
মধ্যবিত্ত সমাজে নাগরিক জীবনের সংগ্রামী এক নারী নাজমা'র সমস্ত বাঁধা আর ঘুরে দাঁড়ানোর জীবন আখ্যানকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাস তুমুল সাড়া ফেলেছিলো পাঠক মহলে।
পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে যা রূপান্তরিত হয়েছিল চলচ্চিত্র অব্দি। অনূদিত হয়েছিল রুশ ও চীনা ভাষায়। কেবল 'ঘর মন জানালা'ই নয়, 'আমলকির মৌ', 'একদা এবং অনন্ত', 'শঙ্খ করাত', 'সদর অন্দর', 'কাকতালীয়', 'স্তব্ধতার কানে কানে'র মতো অসামান্য সব উপন্যাসের জন্ম হয়েছে তার হাতে।
অবশেষে সমস্ত কিছুর অন্তিম হলো। গতকাল শনিবার ৮৬ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের নিজ বাড়িতে মারা গেছেন প্রথিতযশা সাহিত্যিক দিলারা হাশেম।
দিলারা হাশেমের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২১ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গের যশোরে। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দিলারা হাশেম যোগ দেন তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তানে। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন বাংলা খবর পাঠক ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনেও সংবাদ পাঠ করেছেন তিনি।
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় তার বহুল আলোচিত উপন্যাস 'ঘর মন জানালা'। যা বাঙালি পাঠক সমাজে দারুণভাবে সাড়া ফেলেছিল।
কেবল উপন্যাসই নয়, ছোটগল্পেও ছিল দিলারা হাশেম অসামান্য দখল। ১৯৭০ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ 'হলদে পাখির কান্না' প্রকাশিত হলে বাংলা কথাসাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে নেন দিলারা হাশেম।
পরবর্তীতে 'সিন্ধু পারের উপাখ্যান' ও 'নায়ক' নামে দুটো অসামান্য গল্পগ্রন্থও লিখেছিলেন তিনি। গল্প, উপন্যাস দুটোতেই মুন্সিয়ানা দেখানো দিলারা হাশেম ছিলেন কবিও। সত্তরের দশকের শেষভাগে কাব্যগ্রন্থ 'ফেরারি' প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে প্রবাসী হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে স্থায়ী হন দিলারা হাশেম।
এ সময় বিবিসি বাংলা ও ভয়েস অব আমেরিকায় খণ্ডকালীন বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে পূর্ণকালীন মেয়াদে ভয়েস অব আমেরিকায় বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন দিলারা হাশেম। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
সৈয়দ ওয়ালিউল্লার পর দিলারা হাশেমই ছিলে প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি বিদেশে অবস্থানকালে উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার।
Comments