'সংকটের মাত্রা লেখকদের সেভাবে স্পর্শ করে না'
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যেই আদর্শ প্রকাশনী থেকে এসেছে মোরশেদ শফিউল হাসানের 'আত্মপক্ষ ও অন্যান্য গল্প '।
বইমেলা ও নিজের নতুন বই নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: বিভিন্ন সময়ে রচিত ৪টি গল্প নিয়ে আপনার এবারের বই 'আত্মপক্ষ ও অন্যান্য গল্প। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কি গল্প-কবিতা বোধ থাকে?
মোরশেদ শফিউল হাসান: সব মানুষের মধ্যেই কমবেশি গল্প-কবিতা থাকে। অনেকদিন আগে আমি একটা কবিতায় লিখেছিলাম 'সবারই বোধহয় কোনো নিভৃত গল্প থাকে/ …মানুষ তার জমি, বাড়ি, বাগান রেখে যায়/ গল্পের কতখানি?'
তবে বোধের গভীরতা বা তীব্রতা এবং তার সঙ্গে সাধনার যোগেই একজন শেষ পর্যন্ত কবি বা গল্পকার হয়ে ওঠেন। সে পথে সার্থকতা লাভ করেন। জীবনে প্রথমবার প্রেমে পড়ে অনেকেই তো কবিতা লেখেন। সবাই কি কবি হয়ে ওঠেন? নাকি হতে চান?
ডেইলি স্টার: সম্পাদনা, গবেষণার বাইরে কলাম লেখেন। এই গল্পগুলোর মধ্যেও আপনি সামাজিকচিত্র তুলে ধরেছেন। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মোরশেদ শফিউল হাসান: আমার অন্য সকল কাজের মধ্য দিয়েও পেশাগত নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি সবসময় মূল্যবোধের চর্চা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে অন্তত এগিয়ে রাখতে চেয়েছি। আমার গবেষণা, প্রবন্ধ বা কলাম কিংবা কবিতা, গল্প ও ছোটদের জন্য লেখা- সব ব্যাপারেই একথা সত্য। তবে সম্পাদনার বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন। এটা বর্তমানে আমার জীবিকা। আর আমাদের বিদ্যাচর্চার হালফিল অবস্থায় উপভোগ না করেও আমাকে কাজটা করতে হয়।
যে গল্পগুলো লিখেছি, বলতে চাই, মানবিক সংবেদনশীলতাই আমাকে দিয়ে তা লিখিয়েছে। পেছনে সামাজিক সচেতনতারও একটা প্রচ্ছন্ন ভূমিকা হয়তো আছে। তবে লেখক হিসেবে শিল্পের শর্ত পূরণে আমি যত্নশীল ছিলাম, একথা বলতে পারি। বাকি বিচার পাঠক করবেন।
ডেইলি স্টার: সাংস্কৃতিকভাবে বইমেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মোরশেদ শফিউল হাসান: শুধু বইমেলা কেন, আমাদের এ ধরনের যাবতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরই সীমাবদ্ধতা ও অন্তসারশূন্যতা ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। সত্যি কথা বলতে, এগুলো এখন স্রেফ মৌসুমি আয়োজন বা আনুষ্ঠানিকতার বেশি কিছু নয়। বেশ কিছু বছর হয় আমাদের তাবৎ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেন সীমিত হয়ে পড়েছে শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে সেগুনবাগিচা অবধি মাত্র দুই-তিন কিলোমিটার জায়গার মধ্যে। রাজধানীর বাইরে তো দূরের কথা, ঢাকার ব্যাপক জনজীবনের সঙ্গেও তার না আছে কোনো সম্পৃক্তি, না তাকে তা কিছুমাত্র আলোড়িত করতে পারে। আমার তো মনে হয়, আমাদের চিন্তা ও মননে বইমেলার আবেদন বাণিজ্য মেলার চেয়ে আলাদা কিছু নয়।
ডেইলি স্টার: সামাজিক বহুমাত্রিক সংকট চারপাশে আমাদের। গুম নিয়ে আপনি একটি গল্প লিখেছেন। এমন সঙ্কট সাহিত্যে সেভাবে আসে না কেন?
মোরশেদ শফিউল হাসান: হয়তো সংকটের মাত্রা লেখকদের সেভাবে স্পর্শ করে না, কিংবা তাদের মনকে তা ততটা নাড়া দেয় না। কিংবা দিলেও, অনেকে ঝক্কিঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান। সমসময়ের আর দশজন সামাজিক-সাংসারিক মানুষের মতো। স্রোতের বাইরে দাঁড়িয়ে একাকিত্বের যন্ত্রণা ভোগ করতে চান না। এছাড়া জীবনের নানা মোহও কাজ করে।
Comments