বেদনা জাগা জনপ্রিয় ১০টি উপন্যাস
বাঙালি মন চিরকালই বিচ্ছেদযুক্ত। বাংলা সাহিত্য যুগে যুগে বিচ্ছেদের কথাশিল্প- অমর হয়ে আছে। তাতে পাঠকের মন আপ্লুত হয়, নায়ক-নায়িকার মিলন না হওয়ার আক্ষেপে সদ্য শৈশব পেরোনো কিশোরীও চোখের জল ফেলে। এমন বেদনা জাগা জনপ্রিয় ১০টি উপন্যাস নিয়ে লেখাটি।
দেবদাস
বিচ্ছেদধর্মী উপন্যাস বা গল্পের শেষে ট্র্যাজেডির নাম বলতেই বাঙালির প্রথমেই যে উপন্যাসের নাম মনে আসে, তা হলো দেবদাস। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই অমর সৃষ্টি যেন যুগে যুগে বিয়োগাত্মক প্রেমগাঁথার এক নাম। দেবদাস কালজয়ী এই ঔপন্যাসিকের শুরুর দিকের উপন্যাস।
তাতে দেখা যায়, দেবদাস পার্বতী বাল্যকালের বন্ধু। একসময় দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, সঙ্গে বন্ধুত্ব রূপ নেয় প্রণয়ে। কিন্তু দেবদাসের পরিবার পার্বতীর পরিবারের সম্বন্ধ করতে চায় না বিধায় ভেঙ্গে যায় সম্পর্ক। পার্বতীর বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র। পার্বতীর অন্যের চলে যাওয়ার কষ্টে মুষড়ে পড়ে দেবদাস। প্রেমিকার স্মৃতি ভুলতে মদের বোতলই হয় তার একমাত্র আশ্রয়। একসময় জীবনে আসে বাইজী 'চন্দ্রমুখী' কিন্তু সে-ও পার্বতীর দুঃখ ভোলাতে পারে না। উপন্যাসের শেষে পার্বতীর স্বামীর ঘরের দরজার সামনে মৃত্যু ঘটে অসুস্থ দেবদাসের।
শেষের কবিতা
"আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।"
'শেষের কবিতা' উপন্যাসের এই পঙক্তিগুলোই যেন বুঝিয়ে দেয় কাহিনীর সমাপ্তিতে কী আছে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনবদ্য প্রেমের উপন্যাস। অমিত-লাবণ্যের বিরহের সুর বছরকে বছর ধরে পাঠকের মনে যোগ করছে করুণ রসেরধারা। বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত, রোমান্টিক যুবক। শিলং পাহাড়ে বেড়াতে গেলে সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটে লাবণ্যর সাথে। যার পরিণতিতে হলো প্রেম। কিন্তু অচিরেই বাস্তববাদী লাবণ্য বুঝতে পারে তাদের প্রেমে পরিণতি আসা অসম্ভব। অমিতের বাগদত্তা কেতকীর শিলং-এ আসা সেই অসম্ভবকে আরও বেশি জোরালো করে তোলে। ভেঙে যায় লাবণ্য-অমিতের বিবাহ-আয়োজন।
দ্বৈতপ্রেমের আবেশে নিবিষ্ট উপন্যাস শেষের কবিতা যার প্রমাণ মেলে অমিতের একটি উক্তির মধ্য দিয়ে, 'কেতকীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালোবাসারই। কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল, প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যের ভালোবাসা, সে রইল দীঘি। সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।'
পথের পাঁচালী
বিচ্ছেদ বলতে কী শুধু নর-নারীর বিয়োগাত্মক প্রেমের পরিনতিকেই বোঝায়? না, যে কোনো বিচ্ছেদেই পাঠকের মন কাঁদে যদি গল্প সেই রকম হয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি 'পথের পাঁচালি' যুগ যুগ ধরে অপু-দুর্গার বিচ্ছেদের সুর বহন করে চলেছে। অপু দুর্গা যেন আমাদের ঘরের ছোট্ট ভাইবোনটি। অপুর বড় বোন দুর্গার মৃত্যুতে চোখে জল আসে নি এমন পাঠকের দেখা মেলা ভার। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের হাতে পথের পাঁচালির সেলুলয়েড রূপ উপন্যাসটিকে দিয়েছে বিশ্বমানের মর্যাদা।
পথের পাঁচালির তৃতীয় ভাগ 'অপরাজিত' তে অপুর স্ত্রী অপর্ণার মৃত্যুও বাঙ্গালি পাঠককে কষ্ট দিয়েছে। এই কষ্টই যেন 'অপু' চরিত্রটিকে একেবারে নিজের করে নিতে সাহায্য করেছে পাঠকের মনে।
পুতুলনাচের ইতিকথা
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অনন্য সৃষ্টি 'পুতুল নাচের ইতিকথা'। উপন্যাসে প্রধান চরিত্র শশী, পেশায় ডাক্তার। বাস্তবতা ও আধুনিকতার সংযোগে উপন্যাসটি অসাধারণ মর্যাদা লাভ করেছে।
বাংলা সাহিত্যে এই চরিত্র অসামান্য মহিমায় মহিমান্বিত হয়েছে। শশী একদিক থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ভালবাসে একই গ্রামের বাসিন্দা পরানের বউ কুসুমকে। পুতুল নাচের ইতিকথার মাঝে আক্ষরিক অর্থে পুতুল নাচের কোনও কাহিনী নেই। কিন্তু মানুষ গুলো যে কি করে পুতুলের মতো নেচে বেড়ায় তা-ই দেখানো হয়েছে উপন্যাসে।
ক্ষয়িষ্ণু সমাজ বাস্তবতার বিভিন্ন আঙ্গিক এখানে ফুটে উঠলেও কুসুম আর শশী ডাক্তারের ভালবাসা বাঙ্গালির মনকে করেছে আন্দোলিত। এই উপন্যাসের আর একটি দিক হলো, প্রতিটি চরিত্রই একই সাথে দুটো সত্ত্বা লালন করে থাকে। শশীর চরিত্রের দুটো ভাগ-একটাতে তার আবেগ,অন্য দিকে বাস্তবতা। কুসুমকে পুরোপুরি প্রশ্রয় দেয় না ঠিকই কিন্তু, সে একদিন না দিলেই সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কিন্তু উপন্যাসের শেষ সকলেরই জানা, কুসুম আর শশীর বিচ্ছেদ। পুতুলনাচের ইতিকথা রোমান্টিক ঘরানার উপন্যাস না হলেও শশী-কুসুমের বিয়োগাত্মক পরিণতি পাঠকের মনকে ব্যথিত করে।
কবি
বাংলাসাহিত্যকে যে ক'টি উপন্যাস অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তার মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কবি' অন্যতম। কবি উপন্যাসের উপজীব্য অন্ত্যজ শ্রেণির একজন কবিয়ালের জীবনগাথা।
কবিয়ালের নাম নিতাইচরণ। ঘটনাক্রমে সে ভালবেসে ফেলে বন্ধুর রাজার আত্মীয়া বিবাহিত ঠাকুরঝিকে। অসম্ভব জেনেও ঠাকুরঝির প্রতি গভীর ভালবাসা জন্মায় কবি নিতাইয়ের মনে এবং একসময় এ কথা জানাজানি হলে নিতাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। যুক্ত হয় ঝুমুর দলের সাথে। সেখানে তার পরিচয় হয় বসন্তের সাথে। বসন্তের মাঝে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। ফলশ্রুতিতে বসন্তের প্রতি দুর্বলতা জন্ম নেয় তার। কিন্তু বিধি বাম। এই বসন্তও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিতাইকে ছেড়ে চলে যায় পরলোকে। কবি নিতাইচরণ মনের দুঃখে আবারও নিজ গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে এসে জানতে পারে, তার ঠাকুরঝি তার বিরহে পাগলিনী হয়ে মারা গেছে কিছুদিন আগে। সেই মর্মান্তিক হৃদয়ভারের কথাই যেন ফুটে উঠেছে নিতাইয়ের পদে,
'ভালবেসে মিটলো না স্বাদ, কুলাল না এ জীবনে/ হায়! জীবন এত ছোট ক্যানে, এ ভুবনে?'
মেমসাহেব
মেমসাহেব উপন্যাসটির রচয়িতা নিমাই ভট্টাচার্য। রোমান্টিক ঘরানার বইটি কিছু চিঠির সমষ্টিমাত্র। চিঠিগুলো লিখেছেন তরুণ সাংবাদিক বাচ্চু তার দোলাবৌদিকে। কিন্তু দোলাবৌদি উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র নন। উপন্যাসের কেন্দ্রে আছেন এক জ্বলজ্বলে নারী চরিত্র যাকে ঘিরেই নামকরণ, কাহিনী আগায়।
নিজের অনাড়ম্বর জীবনের কথাগল্প শোনাতেই একদিন চিঠি লিখতে শুরু করে দোলা বৌদির কাছে। তাদের গভীর প্রণয় আর ভালবাসায় পূর্ণ খুঁটিনাটি চিঠিতে স্থান পায়। তারা দু'জন দুজনের সাথে ভবিষ্যৎ কাটানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে গ্রীন পার্কের বাসা সাজানো হয়। কিন্তু পরিণতিতে তাদের আর এক হওয়া হয় না। পাঠকের চোখেকে গভীর সমুদ্রের ঢেউ দিয়ে ভিজিয়ে সুনিপুণ ভাবে লেখক তুলে আনেন মেমসাহেব চরিত্রটিকে। ১৯৭২ সালে উপন্যাসটিকে সেলুলয়েডে চিত্রায়িত করা হয় যেখানে বাচ্চু চরিত্রে ছিলেন পশ্চিমবাংলার জনপ্রিয় নায়ক উত্তম কুমার।
ন হন্যতে
ন হন্যতে'-কে উপন্যাস না বলে আত্মজীবনীও বলা যেতে পারে। সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা প্রেমের উপন্যাসটি রচনা করেছেন লেখিকা মৈত্রেয়ী দেবী।
কলকাতায় মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা, প্রফেসর সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর কাছে পড়তে আসেন রোমানীয় যুবক মির্চা এলিয়েড। মৈত্রেয়ী দেবী তখন ষোড়শী কোমলমতি বালিকা। মেয়ের বুদ্ধিমত্তায় গর্বিত মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ওনাকে সেই সময় অপেক্ষা সংস্কারমুক্ত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় করেছিলেন। নিজের প্রিয় ছাত্র মির্চা এলিয়েডের সাথে মেয়েকে অধ্যয়ন করতেও উৎসাহিত করেন উনি। মৈত্রেয়ী দেবীর কথায় উনি এবং মির্চা ছিলেন তার বাবার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র। কিন্তু এরই মাঝে জন্ম নেয় মির্চা এবং মৈত্রেয়ীর ভালবাসাও। তাদের লুকোনো ভালবাসা সম্পর্কে জানার পর মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা মির্চাকে তাঁদের বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেন।
১৯৩৩ সালে মির্চা এলিয়ড 'মৈত্রেয়ী' নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন এবং তাতে ঘটে যাওয়া কাহিনির বাইরেও মনগড়া কিছু ঘটনা লেখেন। সেই সময়কার সত্যতা তুলে ধরতেই ১৯৭৪ সালে মৈত্রেয়ী দেবী 'ন হন্যতে' উপন্যাসটি রচনা করেন। এই উপন্যাসের অনুপ্রেরণায় বলিউডের 'হম দিল দে চুকে সনম' তৈরি হয়।
শবনম
প্রেমের উপন্যাসের তালিকা করলে বাংলায় রচিত 'শবনম' শীর্ষে থাকবে। নায়িকার নামে উপন্যাসের নাম। একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত আফগান বড়লোকের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে এক বাঙালি যুবকের প্রেমকাহিনী নিয়ে 'শবনম' উপন্যাসটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। কেউ কেউ বলে থাকেন, বাঙালি তরুণ-তরুণীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে 'শবনম' উপন্যাসটি পড়ে নেওয়া উচিৎ। 'শবনম' কলকাতার একটি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল বইয়ের কাহিনি যা ১৯৬০ সালে প্রকাশ হয়।
উপন্যাসের নায়ক মজনূনের সাথে শবনমের প্রথম দেখা হয় অস্থিতিশীল আফগানিস্তানের পাগমান শহরে। শবনমের সাথে মজনুনের সাক্ষাৎ, প্রেম, পরিণয়, বিচ্ছেদের মাধ্যমে এগিয়েছে উপন্যাসের কাহিনী।
শবনম তার প্রেমিক মজনুনের প্রতি আবেদন জানিয়েছিল, "আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।" হয়ত সে কারণে তাদের সুখের দিনগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আবার বিপরীত আকুতিও ছিল শবনমের, "আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না"। তাই তো উপন্যাস পড়া শেষ করেও পাঠকের মনে হবে, শেষ হয়েও হইল না শেষ। প্রেম, প্রেমের সফল পরিণতি কিন্তু পরিশেষে শবনমের চলে যাওয়া পাঠককে ফেলে দেয় দ্বিধার জগতে। শবনমকে যখন ডাকাতরা উঠিয়ে নিয়ে যায়, তখন সে তার মজনুনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিল, 'বাড়িতে থেকো, আমি ফিরব'। শবনমের গুণমুগ্ধ পাঠকেরা আজও মজনুনের মতই তার ফেরার অপেক্ষায় থাকে। কেউ কেউ হয়ত শবনম ফিরে এসেছে মজনুনের কাছে- এই কল্পনায় ভেসে তৃপ্ত করে রাখে পাঠক আত্মাকে।
হাজার বছর ধরে
"হাজার বছর ধরে" কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে। বাড়ির কয়েকটি ঘর, পরিবার ও মানুষদের জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার জীবনের গল্পই হাজার বছর ধরে উপন্যাসের মূল উপজীব্য। বৃদ্ধ মকবুলের চতুর্দশী বউ টুনি খেলার সাথী হিসেবে পায় পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ মন্তুকে। চায় খোলা আকাশের নিচে খেলে বেড়াতে, ভেসে বেড়াতে। তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সুঠামদেহী মন্তুকে। টুনি আর মন্তু সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে।
এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায়। অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দু'জন। কিন্ত কেউ মুখ ফুটে বলতে পারেনা মনের কথা, লোক লজ্জার ভয়ে। সেই সুরই ব্যক্ত হয় মন্তুর কণ্ঠে-
"আশা ছিল মনে মনে
প্রেম করবো তোমার সনে"
কিন্তু সমাজের রক্ত চক্ষু ওদের দূরে রাখে। এক সময় টুনির স্বামী বৃদ্ধ মকবুল আকস্মিকভাবে মারা যায় এবং কলেরার আক্রমণে গাঁয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বদলে যায়। কিছুদিন পর মন্তু টুনিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও সে আর তা গ্রহণ করতে পারে না। ইতোমধ্যে তার পরিচয়ে এসে গেছে বিধবা নামে। গ্রামীণ নানা বাধাবিপত্তি আর কুসংস্কারই যেন হাজার বছর ধরে টুনি আর মন্তুর ভালবাসাকে অপূর্ণ করে রাখছে। এই গল্প যেন গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরের, প্রতিটি মানুষের।
কোথাও কেউ নেই
জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক 'কোথাও কেউ নেই' যা দেশের সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নির্দেশক বরকত উল্লাহ নির্দেশিত ধারাবাহিক এটি যার 'বাকের ভাই' চরিত্রটি এখনো দর্শকের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মূলত 'কোথাও কেউ নেই' উপন্যাসের কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ধারাবাহিকটি নির্মাণ করা হয়।
ধারাবাহিকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল "বাকের ভাই"। বাকের ভাই ছিল এলাকার গুন্ডা প্রকৃতির লোক এবং তার সঙ্গী ছিল "বদি" আর "মজনু"। সে ভালবাসতো সেই এলাকারই বাসিন্দা মুনাকে। মুনার চরিত্র ছিল বাকের ভাইয়ের একেবারেই বিপরীত। বাস্তববাদী সংগ্রামী নারী মুনা প্রথমদিকে বাকের ভাইকে পছন্দ করতে না পারলেও শেষের দিনগুলোতে ঠিকই বাকেরের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সময় আর তখন কারো নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মিথ্যে মামলায় ফেঁসে যায় বাকের ভাই, আদালতের রায়ে ফাঁসি হয় তার।
এক ভোরে, আধো আলো অন্ধকারের মাঝে জেল গেট দিয়ে বাকের ভাইয়ের লাশ বের করে দেয়া হয়। আর সেই লাশ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে বাকের ভাইয়ের প্রিয়তমা মুনা। বাকের ভাইয়ের এই ফাঁসি সেই সময়ে দর্শকের মাঝে এতটাই প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল যে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির প্রতিবাদে জায়গায় মিছিল হয়েছিল, লেখকের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিলো বিক্ষুব্ধ দর্শক। বাকের ভাই আর মুনার 'একটি না হওয়া ভালবাসার গল্প' যুগে যুগে পাঠককে কাঁদিয়েছে, কাঁদিয়েছে দর্শককে।
Comments