‘আবুল মনসুর আহমদ তার সময়কালে অনেকের মধ্যেও অসাধারণ একজন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আবুল মনসুর আহমদ তার সময়কালে অনেকের মধ্যেও অসাধারণ একজন। বহুমাত্রিক প্রতিভাবান মানুষ হলেও তার কোনো কাজের মধ্যে দুর্বলতা পাওয়া যায় না। সব দিক থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে নিজের প্রজ্ঞার প্রতিফলন করেছেন তিনি।'
আজ রোববার প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর আহমদের 'আত্মকথা' ও 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' এই দুই বই রিভিউয়ের ওপর মোট ৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুরস্কার দেওয়া হয়।
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আবুল মনসুর আহমদ তার সময়কালে অনেকের মধ্যেও অসাধারণ একজন। বহুমাত্রিক প্রতিভাবান মানুষ হলেও তার কোনো কাজের মধ্যে দুর্বলতা পাওয়া যায় না। সব দিক থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে নিজের প্রজ্ঞার প্রতিফলন করেছেন তিনি।'
'তার আত্মজীবনীতে অহংকার নেই, আছে মানুষের জীবন ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ। তার রচনায় মানুষের কান্না আছে, গভীর ক্রোধ আছে। এই ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে জনপদের গল্প বলেছেন। গতানুগতিক সমাজের সংকট নিয়ে সাহিত্য সংস্কৃতিতে চিত্রায়িত করেছেন। তার সাহিত্যিক পরিচয়কেই আমি তার প্রধান পরিচয় বলে মনে করি,' বলেন তিনি।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, 'আবুল মনসুর আহমদ বাংলাদেশের সাহিত্য ও সামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাসে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাকে স্মরণ করে প্রতিযোগিতার যে আয়োজন তা অব্যাহত থাকবে।'
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, 'আবুল মনসুর আহমদের সময় ছিল অত্যন্ত কঠিন। নানান সমস্যায় সমাজ ছিল আচ্ছন্ন। বিশেষ করে মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আবুল মনসুর আহমদ কাজ করে গেছেন। তার লেখায় কুসংস্কার দূর করার একটা অঙ্গীকার ছিল। আর তা নিয়ে নানান সময়ে সাহসী যুক্তি দিয়েছেন। আজকের দিনেও সামাজিক মুক্তির জন্য তার চিন্তা ও সাহিত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।
স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, 'আপনাদের উপস্থিতি আমাদের আশা জাগায়। আজকের আলোচকদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে দেখব। বিশেষ করে স্মৃতি পরিষদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।'
'অন্যদিকে সারাদেশের প্রতিযোগীরা যেভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বিজ্ঞ বিচারকরা দক্ষতার সঙ্গে মূল্যায়ন করেছেন সঠিক ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে। তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আবুল মনসুর আহমদের বই পড়ার প্রতি আন্তরিক অনুরোধ রইল,' বলেন মাহফুজ আনাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক জালাল আহমেদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক চেঙ্গীশ খান, সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন, গবেষক খান মো. রবিউল আলম, ব্যারিস্টার আরিফ খান ও তাবিব মাহবুব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইমরান মাহফুজ।
২টি বইয়ের ৫ জন বিজয়ী
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত ২টি বইয়ের রিভিউ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন ৫ জন। 'আত্মকথা' শাখায় প্রথম হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস, দ্বিতীয় মুনাজা মাহিন ও তৃতীয় হয়েছেন আমিনুল হক।
'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' শাখায় প্রথম হয়েছেন ফাহিম আহমদে মণ্ডল ও দ্বিতীয় হয়েছেন পূজা পাল।
২ বিভাগে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকার বই, দ্বিতীয় পুরস্কার ২ হাজার টাকার ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ১ হাজার টাকার বই।
প্রতিযোগিতাটি গত ৪ বছর ধরে চলছে। গত ৪ বছরে বিজয়ী ৪২ জনের মধ্যে আহমাদ ওয়াদুদ, সুহৃদ সাদিক, হাসিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু সাইদ ও ফরিদ উদ্দিন রনি আজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
Comments