বড় কাটরা, ছোট কাটরা: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহাসিক স্থাপনা
সংরক্ষণের অভাব ও দখলে ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী দুটি প্রাচীন স্থাপনা বড় কাটরা ও ছোট কাটরা। একক ভবন হিসাবে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুঘল স্থাপনা বড় কাটরা ও ছোট কাটরার আদি কাঠামোর ওপর, সংলগ্ন দুপাশে এবং চত্বরে কংক্রিটের নতুন কাঠামো নির্মাণ করায় ইতোমধ্যেই ঢাকা পড়ে গেছে ভবন দুটির বেশিরভাগ স্থান।
পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ হয়েছে যে খুব অল্প দূরত্ব থেকেও প্রাচীন এই স্থাপনাগুলোকে আর দেখা যায় না।
দখলদারেরা বলছেন, ভবন দুটিতে মালিকানা দাবি আছে তাদের অন্যদিকে গবেষকদের মতে, ভবন দুটি প্রতিষ্ঠার সময় ওয়াকফ করা হয়েছিল। তাই অবস্থানরতরা অবৈধ দখলদার।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বলছে, স্থাপনা রক্ষায় তারা জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
কাটরা ফার্সি শব্দ। যার অর্থ অতিথিশালা। মুঘল ও নবাবি আমলে ঢাকায় প্রচুর কাটরা নির্মিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সদরঘাটে মায়াকাটরা, মৌলভীবাজারে মুকিম কাটরা, নাজিমউদ্দিন রোড এলাকায় নবাব কাটরা, কারওয়ানবাজারের কাটরা। ঢাকায় মুঘল ও নবাবি আমলে নির্মিত প্রাসাদ ও কাটরাগুলোর মধ্যে বর্তমানে শুধু বড় কাটরা ও ছোট কাটরারই অস্তিত্ব আছে।
সুবেদার শাহ শুজার আমলে নির্মিত বড় কাটরা ও সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মিত ছোট কাটরাকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালের ২১ ডিসেম্বর 'সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ' হিসাবে ঘোষণা করে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) 'ঐতিহ্যবাহী বিশেষ ভবন/স্থাপনা' হিসাবে ঘোষণা এবং সংরক্ষণের জন্য তালিকাভূক্ত করে ২০২০ সালে।
আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদের কাঠামোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা যাবে না। ভবন সংলগ্ন বা পাশে এবং চত্বরে নির্মাণ করা যাবে না নতুন কোনো স্থায়ী কাঠামো। কিন্তু দখলদাররা এসব কিছুই না মেনে আদি কাঠামোর ওপর শুধু পরিবর্তন, পরিবর্ধনই করছে না, নতুন নতুন কাঠামো নির্মাণ করে ঢেকে দিচ্ছে ভবনের আদি কাঠামো। বড় কাটরার ভেতরের চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কিছুটা অংশ ছাড়া ভবন দুটির ভেতরের চত্বরও ঢাকা পড়ে গেছে নতুন ভবনে।
গবেষকেরা বলছেন, কাটরা দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ইতিহাসের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন ও গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে।
বুড়িগঙ্গার তীরে যে চারটি প্রাচীন প্রাসাদ আছে তার মধ্যে কোম্পানি আমলের আহসান মঞ্জিলকে ১৯৯২ সালে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে রক্ষণাবেক্ষণ করছে সরকার। কোম্পানি আমলে নির্মিত রূপলাল হাউজকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন। কিন্তু সংরক্ষরণের অভাবে মুঘল আমলে নির্মিত চকবাজারের বড় কাটরা ও ছোট কাটরার অস্তিত্ব সংকটে।
বড় কাটরা
বুড়িগঙ্গা নদী ও চকবাজারের মাঝখানে বড় কাটরার অবস্থান। আগে বড় কাটরার দক্ষিণপাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো বুড়িগঙ্গা। আশির দশকে ঢাকা রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর বড় কাটরা থেকে বাঁধ পর্যন্ত বসতি গড়ে ওঠে। বর্তমানে বড় কাটরা থেকে বুড়িগঙ্গার দূরত্ব প্রায় ৩৮৬ গজ। বড় কাটরার বর্তমান অবস্থান চকবাজার থানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। বড় কাটরার উত্তরে চক সার্কুলার রোড, পূর্ব দিকে সোয়ারীঘাট লেন এবং পশ্চিম দিকে দেবীদাস ঘাট লেন। আর দক্ষিণ গেট থেকে উত্তর গেট পর্যন্ত সড়কটির নাম রাখা হয়েছে বড় কাটরা লেন।
বড় কাটরার দুটি শিলালিপি আছে। তবে প্রাসাদ হিসেবে এই ভবন নির্মাণ শুরু করার কথা শিলালিপিতে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে 'ঢাকার প্রাচীন নিদর্শন' গ্রন্থে (ড'য়লি, ১৮১৪-২৮ ) উল্লেখ করা হয়, আরবী তুঘরালিপিতে ফারসি ভাষায় উৎকীর্ণ উপর্যুক্ত লিপি হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বড় কাটরাটি আদিতে তৈরি হয়েছিল বাসভবন হিসেবে নয়, সরাইখানা হিসেবে-প্রাচ্যের দরবেশদের ভাষায় 'প্রাসাদ নয় মুসাফিরখানা'।
বড় কাটরাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ মুঘল স্থাপত্য হিসেবে বিবেচনা করেন গবেষকরা। আদিতে ভবনটির দক্ষিণ ও উত্তরবাহুর দৈর্ঘ্য ৬৭ দশমিক ৮৯ মিটার এবং পূর্ব ও পশ্চিম বাহুর দৈর্ঘ্য ৬৯ দশমিক ৬৯ মিটার ছিল। একটি আয়তাকার উন্মুক্ত চত্বরকে ঘিরে নির্মিত ভবনটির চারপাশে ছিল কক্ষ। ভবনের সম্মুখদিক ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে দুটি প্রধান প্রবেশপথ। এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ছোট ছোট দুটি প্রবেশপথ ছিল। এর মধ্যে দক্ষিণ দিকের মধ্যে ছিল দক্ষিণমুখী সুউচ্চ রাজকীয় প্রবেশদ্বার। ৩ তলা বিশিষ্ট এই প্রবেশপথটি মনোরম ও সুদৃঢ়। ভবনের বাকি অংশ দোতলা। দক্ষিণ দিকে দুই প্রান্তে ছিল অষ্টভুজাকৃতির ৩ তলা উচ্চতার দুটি ফাঁপা মিনার। ভবনটির নিচ ও দোতলায় রয়েছে অনেক কক্ষ। ভবনটিতে মুঘল রাজকীয় স্থাপত্য রীতির সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
বড় কাটরার উত্তর গেট ও উত্তর বাহু বিলুপ্ত। বর্তমানে আছে বড় কাটরার দক্ষিণ গেট, দক্ষিণ বাহু, পূর্ব বাহু ও পশ্চিম বাহু। এর মধ্যে বর্তমানে দৃশ্যমান অংশ হচ্ছে দক্ষিণ গেটের অংশ বিশেষ, পূর্ববাহুর বাইরের দিকের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ বাহুর পশ্চিম দিকের বাইরের অংশ। এছাড়া ভবনটির বাকি অংশ ঢেকে গেছে নতুন নির্মাণ করা ভবনে। বড় কাটরার দক্ষিণ বাহুর পূর্ব দিকের বাইরের অংশে ইসলামিয়া স্কুল আদি কাঠামোর সঙ্গে নির্মাণ করেছে নতুন পাকা ভবন। ফলে দক্ষিণ বাহুর পূর্ব অংশের পাশাপাশি ঢাকা পড়ে আছে দক্ষিণ গেটেরও অংশবিশেষ। পূর্ব বাহু ও দক্ষিণ বাহুর পূর্ব অংশের ভেতরের দিকে ভবন সংলগ্ন পাকা কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বড় কাটরার পশ্চিম বাহুর উত্তরের অংশটি একেবারেই অদৃশ্য। সেখানেও ভবন তৈরি করা হয়েছে।
বড় কাটরা ভবনের ভেতরের চত্বরের মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাদ্রাসার অংশে কিছুটা উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। এছাড়া পুরো চত্বরের মধ্যে গড়ে উঠেছে দোতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বিভিন্ন ভবন। ফলে বড় কাটরার ভেতরের দিক থেকে দক্ষিণ গেট ও মাদ্রাসার অংশটি ছাড়া আদি কাঠামো আর দেখা যায় না।
ছোট কাটরা
বড় কাটরা নির্মাণের প্রায় দেড় বছর পর নির্মিত হয়েছিল ছোট কাটরা। বড় কাটরার ১৮০ মিটার পূর্ব দিকে চকবাজারের সোয়ারীঘাট এলাকায় সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মাণ করেছিলেন ছোট কাটরা। ছোট কাটরার নকশা বড় কাটরার মতোই।
স্থাপত্য গবেষক ও ইউনির্ভাসিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদ এ প্রসঙ্গে জানান, আকৃতিতে বড় কাটরার তুলনায় শুধু দক্ষিণ গেট ছাড়া ছোট কাটরা বড়। বড় কাটরার দক্ষিণ গেটটি তিন তলা। আর ছোট কাটরার দক্ষিণ গেটটি দোতলা। দক্ষিণ দিকের মূল প্রবেশদ্বারটি কম উচ্চ হওয়ার কারণে হয়তো আকৃতিতে বড় হওয়া সত্ত্বেও ছোট কাটরা নামে অভিহিত করা হয়।
সংলগ্ন দুপাশে এবং আদি কাঠামোর ওপরে নতুন ভবন নির্মাণ করে হেরিটেজ ভবন ঢেকে দেয়ার ক্ষেত্রে ছোট কাটরার অবস্থা বড় কাটরার চেয়েও খারাপ। বর্তমানে ছোট কাটরার দক্ষিণ গেট ও উত্তর গেট শুধু দৃশ্যমান। এছাড়া ভবনের অন্য কোনো অংশ এখন আর দেখা যায় না। ছোট কাটরার উত্তর বাহু, পূর্ব বাহু এবং দক্ষিণ বাহুর প্রায় সম্পূর্ণ অংশে দুপাশে ও উপরে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে পাশ থেকে বা উপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই নতুন নির্মাণ করা ভবনের নিচে রয়েছে ছোট কাটরার আদি কাঠামো। তারপরও ছোট কাটরার উত্তর বাহু, পূর্ব বাহু এবং দক্ষিণ বাহুর আদি কাঠামো দেখতে হলে কয়েক স্তর ভবন পেরিয়ে যেতে হবে।
ওয়াকফ না মালিকানা?
বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় অবস্থানরতদের সম্পর্কে রয়েছে পরস্পর বিরোধী মত। গবেষকদের মতে, ভবন দুটি প্রতিষ্ঠার সময় ওয়াকফ করা হয়েছিল। তাই অবস্থানরতরা অবৈধ দখলদার। অন্যদিকে ভবন দুটিতে মালিকানা দাবি করছে অবস্থানরতরা।
স্থানীয় ওয়ার্ড (৩০ নং ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারে কাছে দাবি করেন, 'বড় কাটরা ও ছোট কাটরা হেরিটেজ ভবন নয়, ভবন দুটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ভবন দুটির প্রত্যেক অংশের ব্যক্তি মালিকানা আছে। মালিকানা নিয়ে, বিক্রি নিয়ে, উত্তরাধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়ে থাকে। এ নিয়ে সংঘাতের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে ভবনটি হেরিটেজ বলে দাবি করা হয়।'
তিনি বলেন, ছোট কাটরা ও বড় কাটরা সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রথমেই সিটি করপোরেশনের এখানে জরিপ করতে হবে। তারপর আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির ফরসালা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, 'বড় কাটরা ও ছোট কাটরার ব্যক্তি মালিকানার দাবি ভিত্তিহীন। বড় কাটরা ও ছোট কাটরা নির্মাণের সময় ওয়াকফ করে দেয়া হয়েছিল। তাই আইন অনুযায়ী এ সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা কোনোভাবেই কেউ দাবি করতে পারে না। বড় কাটরার উত্তর গেটের শিলালিপিতে বিষয়টির উল্লেখ আছে। বড় কাটরা ও ছোট কাটরা সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ। এ সম্পত্তির মালিক সরকার। দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা সত্ত্বেও হয়তো স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে বড় কাটরা ও ছোট কাটরা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।'
তিনি বলেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে সংরক্ষণ করা গেলে লালবাগ দুর্গ, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার, আহসান মঞ্জিল ইত্যাদি স্থাপনাকে ঘিরে তৈরি হতে পারে একটি হেরিটেজ বলয়।
ঢাকা গবেষক ও পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাশেম সূফী বলেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরার মালিকানা প্রসঙ্গটি জটিল। ১৮৫৭ সালের পর থেকে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বড় কাটরা ও ছোট কাটরার বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দ দেয়ার এই প্রক্রিয়া চলেছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের হাতে বর্তমানে মালিকানা আছে। আবার কোনো ক্ষেত্রে মালিকানা ৩ থেকে ৪ বার বিক্রির মাধ্যমে হাত বদল হয়েছে। বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় একটি ছোট দোকানের মালিক-এমন ব্যবসায়ীও রয়েছে প্রচুর। শুধু বড় কাটরায় বর্তমানে আড়াই শতাধিক মালিক রয়েছে।'
হাশেম সূফী আরও বলেন, 'শুধু উচ্ছেদ নোটিশ দিয়ে বড় কাটরাকে উদ্ধার করা যাবে না। এতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। আহসান মঞ্জিলকে রক্ষা করার উদ্যোগ এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে। অধিগ্রহণ আইনে আহসান মঞ্জিলের ২৫০ ওয়ারিশকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার ভবনটি সরকারের অধীনে নিয়ে আসে।'
স্থপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, মুঘল ও নবাবি আমলে ঢাকার ইতিহাসের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে এই দুটি ভবন থেকে। কারণ সুবেদার ও নায়েব নাজিমদের অধিকাংশই বসবাস করেছেন এই দুটি ভবনে। সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মাণ করেছেন লালবাগ দুর্গ। কিন্তু বাস করতেন এখানে। রোজ গার্ডেনকে যেভাবে অধিগ্রহণ করে রক্ষা করা হয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, 'মুঘল আমলে নির্মিত ভবনের মধ্যে বর্তমানে মসজিদ, মাজার, মন্দির ইত্যাদি ধর্মীয় ভবনগুলোই মূলত টিকে আছে। ঢাকায় মুঘল আমলে নির্মিত প্রাসাদ, কাটরা এসব সেকুলার ভবন এখন বিরল। ঢাকায় বর্তমানে একক ভবন হিসাবে শুধু বড় কাটরা ও ছোট কাটরা টিকে আছে। যে কোনো মূল্যে বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে উদ্ধার করা দরকার।'
বড় কাটরা ও ছোট কাটরা চত্বরে এবং আদি কাঠামোর ওপর কোনো ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং নতুন ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
রাজউকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় আদি কাঠামো ভাঙা ও নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিষয়টি শুনলাম। খবর নেবো, দেখবো।
আইন লঙ্ঘন করে বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় আদি কাঠামো ভাঙা ও নতুন ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পন্ডিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষে পাহারা দিয়ে বড় কাটরা ও ছোট কাটরার আদি কাঠামো রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা।
তিনি আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঘোষিত সব সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদের ভূমির মালিকানা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে নেই। প্রতি বছর অধিদপ্তর নির্ধারিত বাজেটের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সাইট অধিগ্রহণ করে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেক সাইট অধিগ্রহন করা সম্ভব হয় না।
বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় অবস্থানরতদের উচ্ছেদ বা পুনর্বাসন এবং সংরক্ষণ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায় জানান, বড় কাটরা ও ছোট কাটরায় অবস্থানকারীদের অন্যত্র সরানোর জন্য রাজউককে চিঠি দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বড় কাটরা ও ছোট কাটরার ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে।
লিখিত উত্তরে রাখী রায় আরও জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে ভবনদ্বয়ে যে প্রতিষ্ঠান ও দখলদার রয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের পর প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার ও সংরক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের সঙ্গে বড় কাটরা ও ছোট কাটরা বিষয়ে কথা বলার জন্য তার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠানো হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে কাগজপত্র দেখতে হবে।
(তরুণ সরকার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও গবেষক)
Comments