পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণ: সাড়ে ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি সর্বোচ্চ আদালতের রায়

পাহাড়তলী বধ্যভূমি। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের সাড়ে ৭ বছর পার হলেও চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

দেশের ৮ জন নাগরিকের করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের মার্চে বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের আদেশ দেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

রিটকারীদের একজন প্রফেসর ড. মুনতাসির মামুন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ধর্না দিতে দিতে আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেছি। যেহেতু আমাদের কোনো পেশী শক্তি নেই, আমরা ইকোনমিক মাফিয়া নই, তাই আমাদের আবেদন কোনো সেকশন অফিসারও শোনে না।'

পাহাড়তলী বধ্যভূমি। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলেও এখন তারাই দেশ চালায় এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ও তারা খুব একটা গ্রাহ্য করে বলে আমার মনে হয় না। কেননা ৭ বছরেরও বেশি সময় আগে জনস্বার্থে করা রিটের রায় এখনও কার্যকর হয়নি।'

'জনস্বার্থে যে রায়গুলো হচ্ছে সেগুলো কার্যকর হচ্ছে কি না, তা মনিটর করার জন্য উচ্চ আদালতে একটা মনিটরিং সেল থাকা উচিত ' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রফেসর মামুন বলেন, 'জনস্বার্থে করা অধিকাংশ রিটের রায় জনগণের পক্ষে এলেও তা কার্যকর হয় না। ফলে জনস্বার্থে এখন রিট করা আর না করা সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রয়াত ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছিলেন।'

রাশেদ হাসান জানান, 'প্রামাণ্য দলিল মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম' বইয়ে প্রয়াত ড. গাজী সালেহ উদ্দিন ৫ হাজারের বেশি মানুষকে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, 'উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা স্বত্বেও এই রায় কার্যকরে এত দীর্ঘসূত্রিতা, এটা সত্যি দুঃখজনক। যেসব বিভাগ বা ব্যক্তি এই রায় কার্যকর করার দায়িত্বে ছিলেন অবশ্যই তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান বলেন, 'বধ্যভূমি যেখানে ছিল সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না করে ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার অন্য জায়গায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিল। বধ্যভূমির জায়গায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) একটি ভবন নির্মাণ করেছে। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে এই ভবনটি উচ্ছেদ করে বধ্যভূমি সংরক্ষণের আদেশ দেন। কিন্তু রায়ের সাড়ে ৭ বছর পার হলেও এখনো পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, '১ দশমিক ৭৫ একর ভূমিতে অবস্থিত চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছি।'

পাহাড়তলী ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার এহসান মুরাদ বলেন, 'পাহাড়তলী বধ্যভূমি অধিগ্রহণ এবং সংরক্ষণের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারতাম।'

অর্থ ছাড় কেন দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রায় ১ বছর আগের পাঠানো চিঠির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা সম্ভবত গত মাসে তাদেরকে সময় বাড়িয়ে দিয়ে আরেকটি দরখাস্ত দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলাম।'

'টাকা তো আর টাইম না থাকলে দেওয়া যায় না। আর বিষয়টি  এমনিতেই জটিল,' যোগ করেন তিনি।

চিঠির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কেন সময় বাড়ানোর অজুহাত দিয়ে এমন চিঠি পাঠিয়েছে তা আমরা জানি না।'

তিনি আরও বলেন, 'স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ এ উল্লেখ আছে প্রাক্কলন প্রাপ্তির ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির অর্থ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা প্রদান করিতে হইবে।'

'ঐতিহাসিক পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষায় আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত ' বলে যোগ করেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মাহফুজুর রহমান বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ১০০টির মতো বধ্যভূমি আছে। কিন্তু একটি বধ্যভূমিও এখন পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।'

তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে চট্টগ্রাম নগরে ৬১টি বধ্যভূমির কথা উল্লেখ আছে।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

10m ago