খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: মোহাম্মদ আবদুর রব, বীর উত্তম
মুক্তিযুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব ছিলেন নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়। তার খেতাবের সনদ নম্বর ০১। মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। সিলেট অঞ্চলে ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ সব যুদ্ধের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন এম এ রব। ১৯৭১ সালে জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ওয়্যার কোর্সের জন্য অফিসার ক্যাডেট নির্বাচনী পরীক্ষায় তিনি ছিলেন প্রধান নির্বাচক।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রব যুদ্ধে যোগ দেন। মুজিবনগর সরকার তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ ও সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে নিয়োগ দেয়।
মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক বৈঠক ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের যুদ্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব। তেলিয়াপাড়ার অবস্থান ছিল ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে। চারদিকে উঁচু-নিচু রাস্তা হওয়ায় প্রতিরক্ষার জন্য তেলিয়াপাড়া ছিল দারুণ এক জায়গা। প্রথমে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের খালেদ মোশাররফ পাকিস্তানিদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে তেলিয়াপাড়া অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ৩০ মার্চ প্রথম তেলিয়াপাড়ায় যোন খালেদ মোশাররফ। এরপর তার নির্দেশে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গলের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। পরে তিনি ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর সফিউল্লাহকে তেলিয়াপাড়ায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। মেজর সফিউল্লাহ ২ এপ্রিল সেখানে যান। এরপর মেজর জিয়াউর রহমান যান এবং খণ্ড খণ্ড বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। কিন্তু প্রয়োজন ছিল সমন্বিত আক্রমণ।
৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারদের বৈঠক হয়। এর আগে ত্রিপুরার আগরতলা থেকে গিয়ে বৈঠকে যোগ দেন কর্নেল ওসমানী। তেলিয়াপাড়ার সেই ঐতিহাসিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবও। আরো উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম রেজা, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফসহ মোট ২৭ জন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার। সেই সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে একটি ছিল— মুক্তিযুদ্ধ একটি কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হবে। রাজনৈতিক সরকার গঠন করার জন্য নেতাদের অনুরোধ করার, যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি এবং যুদ্ধসম্পর্কিত এলাকার দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বৈঠক শেষে কর্নেল ওসমানী পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এদিন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ করানো হয়। এই শপথবাক্য পাঠ করান কর্নেল এম.এ.জি ওসমানী। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পর পাকিস্তান বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের পরে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবের পরামর্শে সরিয়ে নেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্নেল এম এ জি ওসমানী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব জোনের ৪টি সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবকে। এর মধ্যে বিশেষ করে ৪ নম্বর সেক্টরের রণকৌশল এবং চা বাগানগুলোতে গেরিলা অপারেশনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন আবদুর রব। এই সেক্টরে অপারেশন এরিয়ার মধ্যে ১০০টি চা বাগান ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৪ মের সুত্রাকান্দি যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান দখল করে আছে। এই যুদ্ধের পরিকল্পনাকারী ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব। মে মাসের শুরুর দিকে তার নির্দেশে ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জের প্রতিরক্ষা ব্যূহ থেকে পিছু হটে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে বড়গ্রাম বিওপিতে বিকল্প প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করেন। ২০ মে পাকিস্তানি বাহিনী কাছাকাছি এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তুলে। ২৩ মে রাতে ২ জন গ্রামবাসী দৌড়ে গিয়ে আবদুর রবকে পাকিস্তানী বাহিনীর আগমনের খবর জানান। আবদুর রব ১ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর সবুজপুর রেলওয়ে স্টেশনের ঘাঁটি রেকি করতে পাঠিয়েছিলেন। তাদের ফেরার কথা ভোরের মধ্যে। আবদুর রবের মনোবল তখন তুঙ্গে।
২৪ মে ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী আর্টিলারি ফায়ারের মাধ্যমে ২ কোম্পানি সেনা নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে। ১ কোম্পানি আক্রমণ চালাল সুত্রাকান্দি, আরেক কোম্পানি বড়গ্রাম বিওপিতে। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানী বাহিনীর ২৫ জন সেনা নিহত হয়।
ভারতীয় সীমান্তের অপর পাড়ের বিওপিতে মাত্র ১৫ জন সেদিন পাহারায় ছিল। ভারতীয় বিওপি থেকে ৩ মাইল দূরে ছিল বিএসএফের ২ কোম্পানি রিজার্ভ ফোর্স। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর বিওপিতে আকস্মিক আক্রমণ চালালে ২ জন বিএসএফের সিপাহী মারা যায়।
এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্য দলটি সকাল ৭টার মধ্যেই সামনের দিক এবং ডান দিক থেকে আক্রমণ করেও মুক্তিবাহিনীকে পিছু হটাতে পারেনি। তবে এক পর্যায়ে গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। এই যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর ৩৯ সেনা নিহত হয়। ২ জন সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
১ জুন কর্নেল এম এ জি ওসমানী ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। ১০ জুন এম এ রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প করেন। এই কাজে সহযোগিতা করে ভারতীয় ইকো সেক্টর।
১৯ জুন এম এ রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা লতি টিলার বিওপিতে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানে অপারেশন চালান। এর আগে ১৮ জুন রাতে ১ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কুকিতালে চলে যান এম এ রব। সেখানে তাদের ব্রিফ করেন ৭ রাজপুত রাইফেলের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেব। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর ১ প্লাটুন সেনা লতি টিলার বিওপির প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেব ঠিক করেন, তার অধীনে থাকা ২ কোম্পানি সেনাও আবদুর রবের পেছনে থাকবে। এ পরিকল্পনা পছন্দ হয়নি এম এ রবের। তিনি দেবকে বললেন. 'এটি আমার পছন্দ হচ্ছে না। হয় আমাকে আমার মতো করে অপারেশন করতে দিন, নয়তো আপনারা আপনাদের সেনা নিয়ে অপারেশন করুন।' কিন্তু লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেব বললেন, তার পক্ষে এই পরিকল্পনা বদলানো সম্ভব না।
এ সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ রব কিছুটা সময় চান রেকি করার জন্য। কিন্তু তাতেও দেব রাজি হলেন না। এম এ রবের কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারাও এমন তাড়াহুড়ো করে করা পরিকল্পনায় রাজি হলেন না। মধ্যরাতে এম এ রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিওপির দিকে আক্রমণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভোর পৌনে ৬টার দিকে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিওপি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন এবং টেলিফোন লাইন কেটে দেন। প্রথমে বিওপির ভেতরের অবস্থা বোঝার জন্য ৪ জন জওয়ান পাঠান এম এ রব। তারা ফিরে এসে খবর দেন, বিওপির ভেতর কেউ নেই। এরপর এম এ রব একজন হাবিলদার ও ২ জন সেপাইকে বাঙ্কারের ভেতরে গ্রেনেড চার্জ করার নির্দেশ দেন। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা ফায়ারিং শুরু করে। একইসঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর আর্টিলারি ফায়ার বিওপি বরাবর শুরু হয়। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী বিপদ বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। এর ফলে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চল আসে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী এই বিওপি নিজেদের দখলে আনতে পারেনি। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস এই অঞ্চল লেফটেন্যান্ট কর্নেল রবের নেতৃত্বে বেশ নিরাপদে ছিল।
৩ নম্বর সেক্টরের ঐতিহাসিক সবুজপুর বা লাটু রেলওয়ে স্টেশন অপারেশন ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবের এক অসামান্য পরিকল্পনা। এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা এক পর্যায়ে পিছু হটেছিলেন, কিন্তু এর মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে দারুণভাবে ধাক্কা দিয়েছিলেন তিনি। লাটু রেলওয়ে স্টেশন ছিল বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায়। এই এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ পাঞ্জাবের ১ প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা ও ১ প্লাটুন সশস্ত্র রাজাকার দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। এই অপারেশনে আবদুর রবের নেতৃত্বে মোট ৫টি কোম্পানি অংশ নেয়।
৯ আগস্ট রাতে রওনা দিয়ে ১০ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে নির্ধারিত পজিশনে চলে গেল তারা। এই অপারেশনটি ছিল ভয়ংকর এক চ্যালেঞ্জ। কারণ কোম্পানিগুলোর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার উপায়ও ছিলনা। এর মধ্যে ২টি কোম্পানিকে বিয়ানীবাজার থেকে শত্রুদের সংযোগ লাইন কেটে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তারাই পেছন দিক থেকে শত্রুর উপর হামলা শুরু করবে। ১০ মিনিট পর ফায়ার বন্ধ করে পিছু হটবে। আরেক কোম্পানি শাহবাজপুর-বড়লেখা রাস্তায় পজিশন নেবে, যেন পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে জড়ো না হতে পারে। আর ৩ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আবদুর রবের সঙ্গে সম্মুখ আক্রমণে।
প্রথমে মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। শাহবাজপুর স্টেশনের একটি বড় অংশ দখল করে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু এক সময় ফের আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই অপারেশনে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীর ৫০ জনের মতো সেনা হতাহত হয়। ৪টি চা বাগানসহ মোট ২০ বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।
নভেম্বরের ৯ তারিখের বিখ্যাত আটগ্রাম অপারশনের পরিকল্পনাও করেছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব। ২ দিনের এই যুদ্ধে ৩৯ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১১ জন রাজাকারকে জীবিত অবস্থায় আটক করেন মুক্তিযোদ্ধারা। নভেম্বরের শেষ ভাগে আবদুর রবের পরিকল্পনায় একের পর এক দুঃসাহসিক অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনী বিপাকে পড়ে যায়। এরই মধ্যে সিলেট জেলার একাংশ মুক্ত করে ফেলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঐতিহাসিক কানাইঘাট যুদ্ধের পরিকল্পনাকারীও ছিলেন আবদুর রব।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব যুদ্ধ চলাকালীন নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। তার ডায়েরিতে প্রায় সব অপারেশনের ফলাফলের বিবরণ পাওয়া যায়। কেবল তাই নয়, কখন কর্নেল ওসমানী ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছেন, প্রতিটি দলের অবস্থান, সাফল্য, নতুন সেনা যোগ, অপারেশনের দিক নির্দেশনা, অপারেশনের কলাকৌশল থেকে শুরু করে সেক্টরের বড় কোনো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় তার ডায়েরিতে। বিএসএফের সঙ্গে যৌথ মহড়া, অপারেশনের রেকির বিবরণও তার ডায়েরিতে ছিল। ১০ নভেম্বর বিখ্যাত আটগ্রাম অপারেশনের বর্ণনা পাওয়া যায় ওই ডায়েরিতে। যেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রব লিখেছেন, 'শত্রুরা বাল্লা ও গোটাগ্রাম মুক্তাঞ্চল প্রতিরক্ষায় থাকা আমাদের ১ কোম্পানি সৈনিককে আক্রমণ করে। কিন্তু আমাদের সেনারা বীরত্বের সঙ্গে তাদেরকে রুখে দেয়।'
আবদুর রবের এই যুদ্ধের ডায়েরিতে প্রথম ২৪ মের লাটু অপারেশনের কথা উল্লেখ করা হয়। আর সবশেষ ১৭ ডিসেম্বর সিলেট এমসি কলেজে আত্মসমর্পণের কাহিনী উল্লেখ ছিল এতে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল রব ১৪ ডিসেম্বর পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ১৪ ডিসেম্বর কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে সিলেটে যুদ্ধ পরিস্থিতি পরিদর্শনের সময় ফেঞ্চুগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনারা তাদের হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আবদুর রবের পায়ে গুলি লাগে। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মোহাম্মদ আবদুর রবের জন্ম হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কুর্শা খাগাউড়া গ্রামে ১৯১৯ সালে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে বিএ এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পরে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯৪৪ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন আবদুর রব।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে অবসর নেন মোহাম্মদ আবদুর রব। সে বছরেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রবকে মেজর জেনারেল পদ দেওয়া হয় এবং বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-২০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুর রব। ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র দশম খণ্ড
বাংলাপিডিয়া
আহমাদ ইশতিয়াক
ahmadistiak1952@gmail.com
Comments