ক্র্যাক প্লাটুনের শ্বাসরুদ্ধকর 'অপারেশন ফার্মগেট'
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সবচেয়ে কম সময়ের দুর্ধর্ষ অপারেশন হলো অপারেশন ফার্মগেট। একদিকে এই অপারেশন ছিল প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ ও ধরা পড়ার ভয়ও অনেক বেশি। অন্যদিকে ফার্মগেট চেকপোস্ট হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে নিরাপদ চেকপোস্টগুলোর একটি। কারণ এই চেকপোস্ট পার হলে সোজা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গেট। সে সময় আনন্দ সিনেমা হলের ওপরে তাক করে ছিল সেনাবাহিনীর ভারী মেশিনগান। সেখান থেকে দেখা যেত ফার্মগেট চেকপোস্ট।
ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা আব্দুস সামাদের বাড়িতে ঠিক হয় অপারেশনের পরিকল্পনা। প্রথমে এই অপারেশনের জন্য ভাবা হয়েছিল দিনের বেলাই সবচেয়ে আদর্শ হবে কিন্তু পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ হবে তাই ঠিক করা হয় রাতের বেলা হবে অপারেশন। প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল অপারেশন হবে ৭ আগস্ট। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে মিলিটারি পুলিশের টহল বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে ঠিক করা হয় পরদিন হবে অপারেশন। ৮ আগস্ট দিনভর ফার্মগেট ও আশপাশের জায়গায় চলে রেকি। মাত্র দেড় মিনিটের এই দুরন্ত অপারেশনে অংশ নেয় ক্র্যাক প্লাটুনের মাত্র ৬ জন দুর্ধর্ষ বিচ্ছু যোদ্ধা- বদিউল আলম বদি, হাবিবুল আলম, কামরুল হক স্বপন, আবদুল হালিম জুয়েল, পুলু ও আবদুস সামাদ।
এই অপারেশনের অস্ত্র ছিল পাঁচ জনের হাতে পাঁচটি স্টেনগান, আর একমাত্র আলমের হাতে ছিল চাইনিজ এল.এম.জি। কয়েকটি গ্রেনেড-৩৬, রিভলবার এবং কয়েকটি চাইনিজ ফসফরাস গ্রেনেড।
অপারেশন ফার্মগেট
রাত ৮টা ১০ মিনিটে ইস্কাটন থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে তৎকালীন পাক মোটরের ডানে মোড় নিয়ে ধীরগতিতে এগুতে থাকলেন ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলারা। এসময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে ময়মনসিংহ রোডের ধারে দারুল কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে দেখা গেল দুটো জিপ থামিয়ে বেশ কয়েকজন হানাদার সৈন্য কাবাব খাচ্ছে।
ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলাদের নিয়ে এই গাড়ি তেজকুনিপাড়ার বেশ কিছু রাস্তা ঘুরে হলিক্রস স্কুল পেরিয়ে ফার্মগেটের মুখে থামলো। সামাদ গাড়ি থামাতেই বদিউল আলম বদি ক্ষিপ্র গতিতে নেমে এলো। আর চোখের পলকে অবস্থান নিতেই গর্জে উঠলো পাঁচটি স্টেনগান ও চাইনিজ এলএমজি। মুহূর্তের ব্যবধানে কিছুই বুঝতে পারলো না পাকিস্তানি হানাদারেরা।
মুহূর্তের বিভীষিকায় কিছু বুঝতে না পেরে পাল্টা আক্রমণ করার আগেই পাকিস্তানি সৈন্য নিহত।
সঙ্গে থাকা হানাদারদের চোখে তখন সর্ষেফুল। এরই মধ্যে চলছে বৃষ্টির মতো বুলেটের তাণ্ডব। মুহূর্তেই উড়ে গেলো ফার্মগেট চেকপোস্ট আর এদিকে গাড়ি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে গেল গেরিলারা পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল আহত আট জনের মধ্যে চার জন নিহত হয়েছে। বিদ্যুৎ চমকের মতো এই খবর পৌঁছে গিয়েছিল ঢাকা জুড়ে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের এতো কাছে হানাদারদের এভাবে গেরিলাদের গুলিতে নিহত হওয়ার খবর বিশ্বাস করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনারেলদেরও কষ্ট হচ্ছিলো। অপারেশন ফার্মগেট গেরিলাদের পাশাপাশি পুরো ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল নতুন এক উদ্দীপনা।
সূত্র:
ব্রেইভ অব হার্ট/ হাবিবুল আলম, বীর প্রতীক
আহমাদ ইশতিয়াক ahmadistiak1952@gmail.com
Comments