আজ কুমিল্লা মুক্ত দিবস

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্বাধীনতা সৌধ। ছবি: স্টার

আজ ঐতিহাসিক ৮ ডিসেম্বর, কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা ৩ দিক থেকে কুমিল্লা বিমানবন্দরে পাক বাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করেন।

মিত্রবাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর কে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ৩ দিক থেকে আক্রমণ পরিচালানা করেন।

আক্রান্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অদূরবর্তী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে অতিরিক্ত সেনা এবং গোলাবারুদের মজুত বৃদ্ধি করে প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

কিন্তু মিত্র বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় আর মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের মরণপণ আক্রমণে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা তাদের পরিণতি বুঝতে পারে। শেষ রাতে পাকিস্তানি আর্মি তাদের প্রতিরোধ পরিখাগুলো দ্রুত পরিত্যাগ করে ১১ কিলোমিটার দূরে ময়নামতি সেনানিবাসে আত্মগোপন করে।

ফলে ভোরে সূর্যের আলো না ফুটার আগেই থেমে যায় বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণের শব্দ। এসময় এয়ারপোর্ট সংলগ্ন গ্রাম নেউরা, রাজাপাড়া, ঢুলিপাড়া লক্ষ্মীপুর, চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দারা পাকসেনাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

নেউরা এলাকার সত্তরোর্ধ মোহন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এয়ারপোর্ট এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন এলাকাবাসী।

১৯৭১ সালে কুমিল্লা শহরে বসবাসকারী ঝাউতলা এলাকার সৈয়দা হাসিনা খানম ডেইলি স্টারকে জানান, সারারাত প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মির বহু সাজোয়া গাড়ি যেতে দেখেছেন কুমিল্লা এয়ারপোর্টের দিকে। ভোরে অনেকের সঙ্গে শিশু-কিশোর ও নারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন কুমিল্লা মুক্ত হবার আনন্দে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে কুমিল্লা শহরের ভাটপাড়া দিয়ে এবং চৌদ্দগ্রামের বাঘেরচর দিয়ে এসে বিমানবন্দরের পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে।

রাতভর পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরাজিত পাকিস্তানি সেনারা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে ও ময়নামতি সেনা ছাউনিতে আত্মগোপন করে এবং কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে। ভোরে পাকসেনাদের বিমানবন্দরের প্রধান ঘাঁটি দখল করেন মুক্তিসেনারা।

কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে, এই বিজয় উল্লাসে তখন গ্রামগুলো থেকে এবং শহরের মানুষেরা রাস্তায় নেমে আসেন।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভোরে কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়। আগরতলা সোনামুড়া থেকে সেদিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে কুমিল্লায় প্রবেশ করি।'

'অগ্রবর্তী দল হিসেবে ছিল নবম বেঙ্গলের মুক্তিসেনারা। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল ১১ গুর্খা রেজিমেন্ট। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়', যোগ করেন তিনি।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

5h ago