‘বরিস নেতৃত্বের যোগ্য নন’, দাবিতে ৮ মন্ত্রীর পদত্যাগ

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্বের ওপর আসছে একের পর এক আঘাত। সর্বশেষ ঘটনায় বরিসের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য 'তিনি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নন', এই দাবি তুলে পদত্যাগ করেছেন।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বরিস জনসনের মন্ত্রিসভা থেকে অর্থমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আরও কয়েকজন কনিষ্ঠ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরিস জনসনের প্রশাসন কলঙ্কিত হয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সরকারের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।

ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, বরিস জনসনের সময় শেষ হয়ে এসেছে। তবে তিনি তার পদ ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাধিম জাহাউই কে। অন্যান্য কিছু শুন্যপদও পূরণ করেছেন তিনি।

নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাধিম জাহাউই। ছবি: রয়টার্স
নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাধিম জাহাউই। ছবি: রয়টার্স

আজ পার্লামেন্টে সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর সেশনে বোঝা যাবে বরিস তার নিজের দলের সদস্যদের কাছ থেকে কী ধরনের বিরূপ মনোভাবের মুখোমুখি হচ্ছেন। পরবর্তীতে তিনি পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারদের সঙ্গে একটি পূর্ব-নির্ধারিত ২ ঘণ্টার বৈঠকে বসবেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে রক্ষণশীল দলের এক সংসদ সদস্য রয়টার্সকে জানান, 'আমার সন্দেহ, তাকে আমাদের ঘাড় ধরে ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বের করে দিতে হবে। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকবেন এবং সবাইকে লাথি মারার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আমাদেরকে যদি সেই পথে যেতে হয়, আমরা সেটাই করবো।'

গত কয়েক মাসে বরিসের নেতৃত্বে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত ও কেলেঙ্কারির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। ফলে দল ও দেশের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাকে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ না মানার জন্য জরিমানা করে এবং ডাউনিং স্ট্রিটের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) কর্মকর্তাদের নীতিমালা বহির্ভূত আচরণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও তিনি এমন একজন সংসদ সদস্যের প্রতি সমর্থন জানান, যিনি তদবিরের আইন ভঙ্গ করেছেন। বরিসের বিরুদ্ধে সমালোচনার আরেকটি উৎস হল তিনি নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি, যার ফলে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা তেল ও খাবারের উচ্চ মূল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সর্বশেষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনি এক সংসদ সদস্যকে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় চেতনা বজায় রাখার দায়িত্ব দেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে আগে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ থাকায় বিষয়টি বেশ বিব্রতকর হয় এবং এক পর্যায়ে বরিস জনসন আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়োগের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।

মজার বিষয় হচ্ছে, নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে এ বিষয়টি সম্পর্কে বরিস জনসনকে জানানো হয়েছিল।

এসব ঘটনায় অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এবং আরও ৬ জুনিয়র মিনিস্টার ও প্রতিনিধি পদত্যাগ করেন।

মন্ত্রীসভা বৈঠকে বরিস জনসন।
মন্ত্রীসভা বৈঠকে বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের পদত্যাগেও কিছু সংসদ সদস্য বরিস জনসনের প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন।

এক মাস আগে রক্ষণশীল দলের অনাস্থা ভোটে জেতেন বরিস, যার অর্থ হচ্ছে আগামী ১ বছর তার প্রধানমন্ত্রীত্ব বাতিল বা পরিবর্তনের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাবে না।

তবে দলের কিছু সংসদ সদস্য এই আইন পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

দেড় বছর আগেও তুমুল জনপ্রিয় বরিস জনসনের সঙ্গেই ছিলেন পার্লামেন্টের বেশিরভাগ সদস্য। তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল ব্রেক্সিট সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা। 

তবে এরপর করোনাভাইরাস নিয়ে বরিসের নীতি প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং তার সরকার একের পর এক সমস্যায় পড়েছে।

ইউক্রেনকে সহায়তা করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রশংসা পেলেও দেশের জনগণের মতের ওপর তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। জনমত জরিপে তার জনপ্রিয়তা খুবই কম এসেছে।

লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টার্মার বলেন, 'এত ধরনের নোংরামি, কেলেঙ্কারি আর ব্যর্থতায় একটা বিষয় পরিষ্কার, আর তা হল, এ সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh sees window of opportunity in Trump’s trade war

US President-elect Donald Trump’s trade policies towards China and Mexico could ultimately benefit Bangladesh, according to local apparel exporters.

9h ago