ইউক্রেনে ক্যাম্পে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে: অনির্বাণ

ইউক্রেনে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারেরও চেষ্টা করছে পোলান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে আটকে পড়া থাকা এবং ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে আসা বাংলাদেশিদের জন্য নিজেদের সাধ্যাতিরিক্ত করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর অনির্বাণ নিয়োগী এমনটিই জানান।

ডিটেনশন সেন্টার থেকে কয়েকজন বাংলাদেশি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের আটকে রেখে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে। 

ইউক্রেনের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্ধারে নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, 'আমি ৩ মার্চ থেকে পোল্যান্ডে ইউক্রেনের দূতাবাসের মাধ্যমে ইউক্রেন বর্ডার গার্ড এবং ইউক্রেন মাইগ্রেশন সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। আমি তাদের বলেছি, যুদ্ধাবস্থায় তাদের আটকে রাখা, তাদের ব্যবহার করা (মানব ঢাল হিসেবে) বা তাদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন; তোমাদের উচিত দ্রুত সহায়তা দিয়ে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশিদের যেন পোল্যান্ডে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি যারা অবৈধভাবে সেখানে আছেন, তাদের সব ধরনের দায়বদ্ধতাও আমাদের বলে জানিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা আমি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি।'

'ইউক্রেনের ভেতরে যারা আটকা পড়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্ধারের ব্যাপারে আমি পূর্ব ইউরোপে বাংলাদেশের ডিজি বদিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানকার অবস্থা এবং করণীয় সম্পর্কে আমি তাদের জানিয়েছি। সাধ্যাতিরিক্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। দেশটিতে থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে আনার ব্যাপারে ৩ মার্চ থেকে প্রচেষ্টা শুরুর বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, 'আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত হয়ে আসা মানুষগুলোকে সহযোগিতা করা। যারা সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ডে ঢুকছিলেন তারা একেবারেই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং অনেকাংশে শারীরিক পরিশ্রম ও যুদ্ধের আতঙ্কে মানসিকভাবে বিপর্যস্তও। সীমান্তে যারা আসতে পেরেছেন তাদের আমাদের পরিবহনের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসে খাবার এবং আগে ঘুমানোর ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল তাদের বাঁচানো।'

'ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তের মোট ৮টি পয়েন্ট দিয়ে ইউক্রেন ছাড়ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের স্বল্প জনবল নিয়ে প্রতিটি পয়েন্টে অবস্থান করা সম্ভব ছিল না। বিভিন্ন মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যেরভিত্তিতে দূতাবাস কর্মকর্তারা করকফজা, বুদুমশ ও মেডিকা সীমান্ত পয়েন্ট সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। করকফজা ও বুদুমশ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশকারী সবাইকে গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে দেখে দূতাবাস কর্মকর্তারা অবস্থান নেন মেডিকা সীমান্তে। কেন না, মেডিকা সীমান্ত হয়ে যারা আসছেন, তাদের অবস্থা বেশি খারাপ এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য দেশটির সরকারি ব্যবস্থাও ছিল অপ্রতুল। তাই ওই পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের জীবন বাঁচাতেই কর্মকর্তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন।'

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফাবিহা বিনতে মাহবুবসহ ৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি তার অবস্থা পুরোটাই বুঝতে পারছি। তাদের সহযোগিতা করাটা আমাদের দায়িত্ব। তবুও আমি আজ তাদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের অপারগতায় ক্ষমা চাইব। তারা বুদুমশ পয়েন্ট দিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকবে বলে খবর পেয়ে সেখানে আমি প্রায় ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। এই সময়ের মধ্যে না আসায় আমাকে মেডিকা পয়েন্টে ফেরত যেতে হয়েছে। মেডিকা পয়েন্টে প্রথম ৪ দিন নেটওয়ার্ক না থাকায় তারা আমাকে ফোনেও পায়নি। আমাকে না পেয়ে তারা যোগাযোগ করে বিল্লালের সঙ্গে। এখানকার সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এই মিস কমিউনিকেশন হয়েছে।'

ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের সীমান্তে চলে আসা বাংলাদেশিদের আনতে আমাকে দেশটির ভেতরেও ঢুকতে হয়েছিল। সেখানে দেশটির বর্ডার গার্ড পাগলের মতো আচরণ করছিল। বন্দুক হাতে নিয়ে তারা মানুষজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল, মারবে বলে ভয় দেখাচ্ছিল। অবস্থা এমন হয়েছিল যে আমি জীবন নিয়ে ফিরতে পারব কি না সে বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে তারা খুবই খারাপ ব্যবহার করছিল।'

ইউক্রেন থেকে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে ঢুকেছেন। পোল্যান্ডে আজ শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় দেশটির বর্ডার গার্ডের কাছ থেকে সবশেষ তথ্য নিতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাস। সেইসঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামী সোমবার তাদের কাছ থেকে সঠিক পরিসংখ্যান দূতাবাস পাবে বলে আশা করছেন অনির্বাণ নিয়োগী।

Comments

The Daily Star  | English

Taskforce report: 8 mega projects cost $7.5b more for graft, delay

The costs of eight mega projects soared by a staggering 68 percent, or $7.52 billion from the initial estimation, mainly due to poor and faulty feasibility studies, corruption, and delays in launch, according to the report of a government-formed task force.

7h ago