গুগলের ‘ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ’ টুল নেবে সাক্ষাৎকার
চাকরির ভাইভা থেকে বিদেশে শিক্ষার সুযোগ সব ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতে মুখোমুখি হতে হয় সাক্ষাৎকারের। অনেকেই আছেন যারা সামনাসামনি কথা বলতে পারেন না বা দ্বিধায় ভোগেন। তাদের জন্য গুগল নিয়ে এলো বিশেষ সুবিধা।
পূর্ব অনুশীলন করতে না পেরে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ভয় দূর করতে গুগল এবার নিয়ে এসেছে 'ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ' টুল।
গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন 'ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ' নামক অনুশীলনমূলক টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাক্ষাৎকারের সাধারণ প্রশ্নগুলো করে এবং ব্যক্তির উত্তরের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাক দেয়।
সাধারণত এই ধরনের অনুশীলন করার জন্য মনের মতো সঙ্গী তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। আর পেলেও ভুল উত্তর, একই উত্তর পুনরাবৃত্তির ফলে বিরক্ত হওয়ার ভয় থেকে যায়। কিন্তু গুগলের ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ টুলটি এক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রয়োজনীয় কনটেন্টগুলো বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সজ্জিত থাকায় আরও বেশি অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে এটি ব্যবহারে।
সাক্ষাৎকার বোর্ডে আপনার সম্পর্কে জানতে চাওয়ার মতো সাধারণ প্রশ্নের পাশাপাশি পরিস্থিতিমূলক প্রশ্নও করে থাকে টুলটি। যেমন আপনি ভুল করেছেন এমন একটি ঘটনা জানতে চাইবে, আপনি কীভাবে বুঝলেন সেটি ভুল হয়েছে, তারপর ভুলটি কীভাবে সমাধান করেছেন ইত্যাদি জানার মাধ্যমে আপনার মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যাচাই করবে টুলটি।
এছাড়া প্রযুক্তিগত প্রশ্নোত্তর এবং ডেটা অ্যানালিস্ট, আইটি সাপোর্ট, ই-কমার্স, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও ইউএক্স ডিজাইন ইত্যাদির মতো দক্ষতাভিত্তিক নানা ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীদের জ্ঞান যাচাইয়ের প্রশ্নও করে গুগলের 'ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ' টুল।
যেহেতু মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপে অনুশীলন করা যায়, টুলটি সহজেই শব্দ প্রতিলিপি করার মাধ্যমে কোন শব্দ ৩ বারের অধিক সময় বলা হয়েছে সেটি শনাক্ত করে আপনাকে সতর্ক করতে পারবে। সেসব শব্দ ব্যবহার না করে কী কী প্রতিশব্দ বলা যেতে পারে তার ধারণাও পাওয়া যাবে।
এছাড়া প্রশ্নের উত্তর নির্দিষ্ট চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা এবং দক্ষতা, অভিজ্ঞতাসহ পূর্ব অনুশীলন থেকে পয়েন্টের উন্নতি, অবনতি এবং লক্ষ্যের প্রতি নজর রাখে গুগলের বিশেষ টুলটি।
গুগলের 'জাজমেন্ট ফ্রি জোন' হিসেবে পরিচিত এই টুলটি আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এটি অডিও বা ট্রান্সক্রিপ্ট সেইভ করে না কিন্তু কেউ চাইলে নিজ প্রয়োজনে ডাউনলোড অপশনের সাহায্যে সেগুলো সংরক্ষণ করতে পারবে।
তবে সমাজবিজ্ঞানীদের মতে একটি টুল কখনো মানুষের সমতুল্য হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে তা একটি যন্ত্রভিত্তিক টুল থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ টুলটি ভাষা ও ব্যাকরণগত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যেকার মৌখিক যোগাযোগে এটির যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তবে টুলটি ব্যবহারে যে ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি পায় সেটি নিশ্চিত করেছেন সাক্ষাৎকার প্রশিক্ষক মিয়া উইলিয়ামস। তিনি কলেজ ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারভীতি দূর করতে ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ টুলের মাধ্যমে অনুশীলন করার পরামর্শ দেন।
তার মতে, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করার ব্যাপারটি এই টুল দ্বারা প্রতিস্থাপন করা না গেলেও এটি ব্যক্তির চিন্তা-চেতনাকে সুসংগঠিত করতে পারে।
তবে একটি সাক্ষাৎকার কেবল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যোগাযোগের একটি পর্যায়। যেখানে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণে প্রতিধ্বনিত হয় ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, কথা বলার সময় চেহারা এবং অঙ্গভঙ্গিতে ফুটে ওঠে উদ্দীপনার প্রতিচ্ছবি।
হতে পারে আপনি সব প্রশ্নের উত্তর জানেন। কিন্তু আপনার উত্তর প্রদানের ধরণে রয়েছে অসঙ্গতি, ঘাটতি রয়েছে আগ্রহের বহিঃপ্রকাশে। তাহলে সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ পাওয়ার আশা করাটা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত হবে? না। ভুলে গেলে চলবে না, সুযোগ সীমিত কিন্তু প্রার্থী নয়।
মনে রাখতে হবে, এ ধরনের মৌখিক যোগাযোগে সাক্ষাৎকারদাতার পরনের পোশাক থেকে গলার স্বরের ওঠানামা সবকিছুই নজরে পড়ে টেবিলের বিপরীত পাশে বসা মানুষের চোখে। যা একটি টুল কখনো শনাক্ত করতে পারে না। তাই এই টুলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে না করে বরং আনুষঙ্গিক প্রয়োজনের অনুরূপ একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া
Comments