সুপেয় পানির সংকট, বাগেরহাটে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ট্যাঙ্ক স্থাপনের দাবি

ভূ-অভ্যন্তরের প্রতিবন্ধকতা ও কারিগরি সক্ষমতা না থাকায় বাগেরহাট জেলার ৬টি উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে অগভীর নলকূপের পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ছাড়া বিকল্প নেই এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলার ৬ উপজেলায় ১০ হাজার ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছে। তবে এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিটি বাড়িতে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপন।
ঘরের টিনের চাল থেকে পাইপের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে বৃষ্টির পানি জমা হয়। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

ভূ-অভ্যন্তরের প্রতিবন্ধকতা ও কারিগরি সক্ষমতা না থাকায় বাগেরহাট জেলার ৬টি উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে অগভীর নলকূপের পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ছাড়া বিকল্প নেই এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলার ৬ উপজেলায় ১০ হাজার ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছে। তবে এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিটি বাড়িতে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপন।

জেলার মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া ও চিতলমারী উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। এসব উপজেলায় গত ৫ বছর ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে।

জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ৫৮৯টি, কচুয়ায় ২ হাজার ১৩৬টি, রামপালে ৮২২টি, শরণখোলায় ১ হাজার ২৬৮টি, চিতলমারীতে ১ হাজার ৬৩০টি এবং মংলায় ১ হাজার ৯৯০টি প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে বলে অধিদপ্তর সূত্র জানায়।

কচুয়া উপজেলার কলমিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এলাকার সব পুকুর প্রায় শুকিয়ে গেছে। কয়েকটি পুকুরে অল্প পানি আছে। কিন্তু এর পানি এতই নোংরা যে আমরা সেখানে গোসলও করতে পারি না। আমরা রান্না ও খাওয়ার জন্য সুপেয় পানির তীব্র সংকটে আছি।'

একই উপজেলার চান্দেরখোলা গ্রামের বাসিন্দা মজিদ শেখ বলেন, 'গরমে লবনাক্ততার অনুপ্রবেশের কারণে আমরা কাছাকাছি খাল বা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারি না। অনেক সময় আমরা লোনা পানিতে গোসল করতে বাধ্য হই। এতে চর্মরোগ হয়।'

বাগেরহাটের ৬ উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির অভাব থাকায় পুকুরের পানি দিয়ে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ সারতে হয় অনেক পরিবারকে। ছবি: সংগৃহীত

'এমনকি আমরা গভীর নলকূপের পানিও পাই না,' যোগ করেন তিনি।

কচুয়ার কলমিবুনিয়া গ্রামের রুহুল শেখ বলেন, 'আমাদের ৩৫ টাকায় ২০ লিটারের বিশুদ্ধ পানির জার কিনতে হচ্ছে।'

মোরেলগঞ্জ উপজেলার চর হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা করিম শেখ বলেন, 'জীবিকা নির্বাহের জন্য এমনিতেই আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এর মধ্যে পানি কেনা আমাদের জন্য কঠিন।'

প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এ ধরনের ট্যাঙ্ক বসানোর দাবি তাদের।

কচুয়ার শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আশিস দাস কালু বলেন, 'সরকার অনেক পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছে। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে এগুলো পর্যাপ্ত নয়। তাই, আমরা প্রতিটি বাড়িতে ট্যাঙ্ক স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।'

যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাটের ডিপিএইচই নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার এই ট্যাঙ্ক বিতরণ অব্যাহত রাখবে। আমাদের প্রতিটি বাড়ির উঠানে ধীরে ধীরে ট্যাঙ্ক বসানোর পরিকল্পনা আছে।'

ডিপিএইচই কর্মকর্তারা এবং স্থানীয়রা জানান, প্লাস্টিকের এই ট্যাঙ্কগুলোতে কয়েক মাসের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিটি ট্যাঙ্কে ৩ হাজার লিটার পানি ধরে।

কচুয়া উপজেলার রাড়িপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বাপ্পি দেবনাথ বলেন, 'এই ট্যাঙ্কগুলো আমাদের জন্য খুবই কাজের। ৩-৪ মাস আমরা বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারি। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকটও দূর হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'যখন বৃষ্টি হয় ট্যাঙ্কগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভরে যায়। বিশুদ্ধ পানি ধরে রাখতে আমাদের আলাদা সময় দিতে হয় না।'

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

12h ago