‘সুজন যদি সরকারের প্রশংসা করে তাহলে সমালোচনা করবে কে?’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেছেন, 'বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছে না, এমনকি তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করার সাহসও দেখাতে পারছে না।'

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-এর একটি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আকবর আলী খান বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ৪টি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, ''পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে ভোটের সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন প্রক্রিয়া পরিহার করে 'প্রপোরশনাল মেজরিটিকে' গ্রহণ করছে। সেখানে এ দেশে এখনো ভোটের সংখ্যাধিক্যই সরকার গঠনের মূল ভিত্তি।'

এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার বদলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকলে সংসদে ভিন্নমতের প্রতিফলন হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এদেশে সব ক্ষমতা একজনের হাতে কুক্ষিগত আর সরকারপ্রধান একইসঙ্গে দলীয় প্রধান। ফলে তাকে রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখার দিকে নজর দিতে হয়। গণতান্ত্রিক এসব চ্যালেঞ্জের ফলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তার একটি হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার বলছে, সুজন শুধু সরকারের সমালোচনা করে। সুজন যদি সরকারের প্রশংসা করে তাহলে সমালোচনা করবে কে? সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল সোসাইটি আছে, যার কাজ হলো জনগণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ তুলে ধরা।'

সুজনের দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, 'যেকোনো শাসন ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো শাসন কাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তারপর গণতন্ত্র; এটা কোনো কাজের কথা নয়।'

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, 'রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমও যা করতে পারে না, সিভিল সোসাইটির সংগঠনকে সেগুলো করতে হবে। সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সরকার কোথায় কী ভুল করছে, সেটি তুলে আনাই সুজনের কাজ।'

তিনি বলেন, 'ভোটাধিকারের সংগ্রামে আপনাদের (সুজনের সদস্যদের) সমর্থন খুবই জরুরি। যেখানেই অন্যায় হবে, সেখানেই আপনারা মানুষের কথাগুলো বলবেন।'

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, 'দেশে যখন সব প্রতিবাদী সংগঠন গুটিয়ে যাচ্ছে সেখানে সুজনই একমাত্র তাদের প্রতিবাদের ভাষা বহাল রেখেছে।'

'গণতন্ত্রের সবগুলো সূচকে আমাদের অবনমন ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়াতেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। গণতন্ত্রের একটি বড় উপাদান হচ্ছে সুশাসন। দেশে সুশাসনের অবক্ষয় হলে গণতন্ত্র কোত্থেকে থাকবে? সুশাসন রক্ষায় তাই সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।'

'আগে সরকারি পেনশন তোলার জন্য এজি অফিসের কর্মচারীদের ৩০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা না দিলে পেনশন তোলা যেত না। কিন্তু এখন তো আইটি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকা সরাসরি ব্যাংকে চলে যায়, কর্মচারীদের সঙ্গে দেখাই হয় না। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এসব ছোটখাটো দুর্নীতি কমে এসেছে। কিন্তু বড় বড় দুর্নীতি তো যায় নাই, আরও বড় হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি দিয়ে এ দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য সুজন-এর মতো সংগঠনগুলোকে কাজ করে যেতে হবে', বলেন শামসুল হুদা।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। সভাপতিত্ব করেন সুজন সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেন। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, 'আমরা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি, পাকিস্তানি শাসন থেকে একবার স্বাধীন হয়েছি। দুবার স্বাধীন হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখনো নাগরিকত্ববোধ তৈরি করতে পারিনি। আমরা নাগরিক হতে পারিনি, আমরা কেবল হয়েছি পেট্রন ক্লায়েন্ট।'

তিনি বলেন, 'নাগরিকরা হলো ক্লায়েন্ট এবং রাজনৈতিক নেতা হলো পেট্রন। আমরা এখনো যা পাই তা মূলত পাই রাজনৈতিক নেতাদের অনুগ্রহের কারণে, আমাদের অধিকার না। সুজন-এর সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নাগরিকতা ও নাগরিকত্ববোধ তৈরির উদ্দেশ্যে।'

তিনি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটি ঐকমত্য সৃষ্টির দাবি জানিয়ে ২১ দফা জাতীয় সনদ ঘোষণা করে বলেন, 'এই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হবে একটি স্বল্প মেয়াদের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং আগামীতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা এই ঐকমত্যের সনদ বাস্তবায়ন করবেন। আবার আর যেন এক দিনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়।

সম্মেলনে সংগঠনের সারা দেশের কর্মী সমর্থকেরা অংশ নেন।
 

Comments

The Daily Star  | English
India visa restrictions for Bangladeshi patients

A wake-up call for Bangladesh to reform its healthcare

India’s visa restrictions on Bangladeshi nationals, while initially perceived as a barrier, could serve as a wake-up call for Bangladesh to strengthen its healthcare system and regain the confidence of its patients.

12h ago