সিলেটের মোমিনছড়া চা বাগান

‘সারাদিন কাম করি, রাতে ঘরের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজি’

নিয়মিত চা শ্রমিক সীতা মৃধা তার ঘর মেরামত করছেন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মোমিনছড়া চা শ্রমিকদের বসবাসের উপযোগী ঘর নেই। সুপেয় পানির আর স্যানিটেশনের ব্যবস্থাও নাজুক। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, পর্যায়ক্রমে সব সমস্যা সমাধান করা হবে। 

চা শ্রমিক অনিমা মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদিন চা বাগানে কাম করি রাতে বাড়িতে এসে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। কারণ ঘরের সব টিনে ছিদ্র।'

পাঁচ কন্যা সন্তানের জননী চা শ্রমিক শ্রীমতি মৃধা বলেন, 'টাকার অভাবে আমার সন্তানদের তেমন একটা পড়াশোনা করাতে পারিনি। প্রথম সন্তানকে সপ্তম শ্রেণির পড়ে আর পড়াতে পারিনি। দ্বিতীয় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। তৃতীয় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর পড়তে পারেনি। বৃষ্টির রাতে আমাকে খাটের নিচে ঘুমাতে হয়। চা বাগান কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি। কেউ আমার কথা শুনে না।'

নিজের ঘরের সামনে এক চা শ্রমিক। অধিকাংশ চা শ্রমিকের ঘরের অবস্থা এমন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

চা শ্রমিক দিবসমনি বাউরি বলেন, 'আমাদের ঘরে টয়লেট নেই। চা বাগানের সেকশনে যেতে হয় টয়লেটের জন্য। ঘরটি তালি দিয়ে রেখেছি। রাতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। যেকোন সময় ধসে যেতে পারে।'

চা শ্রমিক সীতা মৃধা বলেন, 'কিছুদিন আগে বৃষ্টির সময় রাতের বেলা আমাদের ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। উপায় না পেয়ে নিজেই ঠিক করছি। রাতে দেয়াল ধসে পড়ার স্থানে নিজের শাড়ি দিয়ে আড়াল করে রাখি।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মোমিনছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নিপেন মৃধা বলেন, 'বিভিন্ন সময় চা শ্রমিকরা ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও কাজে আসছে না। দাবি দাওয়ার প্রতিবাদে শুধু নারী চা শ্রমিকরা আধাবেলা কাজে যেতে শুরু করে।'

পূর্ব নোটিশ ছাড়াই মোমিনছড়া চা বাগানের মালিক পক্ষ ২৫ মে বুধবার সন্ধ্যায় বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে করে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ৮০০ শ্রমিক।

নিপেন মৃধা বলেন, '৩৩ বছর পূর্বে বর্তমান মালিক পক্ষ বাগান পরিচালনার শুরুতে ও চা বাগান উন্নয়নের জন্য শুধু ১ বছরের জন্য ২০ কেজির পরিবর্তে ২৫ কেজি চা পাতা তোলা নির্ধারণ করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল শুধু শুরুর ১ বছর ২৫ কেজি তুলতে হবে, পরবর্তী বছর থেকে ২০ কেজি তুলতে হবে। আজ অবধি ২৫ কেজি তুলতে হচ্ছে, আর কমানো হয়নি। দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে ২৫ কেজি করে চা পাতা তুলতে বাধ্য করা তীব্র শ্রম শোষণ। আমাদের জানামতে কোনো বাগানের চা উত্তোলন বর্তমানে ২৫ কেজি নয়।'

তিনি বলেন, 'আপাতত চা বাগান গত পহেলা জুন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে আলোচনা সাপেক্ষে দাবিগুলো পূরণ করা হবে। বেশিরভাগ চা শ্রমিকদের বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টি হলেই সবাই আতঙ্কে পড়ে যায়। যেকোনো সময় দেয়াল ভেঙ্গে যেতে পারে।'

এ বিষয়ে মোমিনছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিজওয়ান আলম বলেন, 'সবার সম্মতিক্রমে আমরা চা বাগান গত পহেলা জুন বৃহস্পতিবার থেকে খুলে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব দাবি পূরণ করা হবে।'

সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, 'চা শ্রমিকরা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানায়নি এবং তাদের ধর্মঘটে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The Inspector General of Police (IGP) has issued a comprehensive new dress code titled Police Dress Rules, 2025, detailing rank-wise uniforms and accessories for all Bangladesh Police members.

3h ago