শেষ হয়নি বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের সংস্কার কাজ, ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ঈদযাত্রা নিয়ে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের শঙ্কা ততই বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু ব্রিজের পশ্চিমপাড়ে চলমান উন্নয়ন কাজ উত্তরের যাত্রীদের আসন্ন ঈদযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা এ পথের যাত্রীদের।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হবে উত্তরের ঈদযাত্রা। এ সময় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ৩ গুণের বেশি বাড়তে পারে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের বিভিন্ন জেলার মধ্যে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে সংস্কার কাজ চলায় ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার পর কয়েকগুণ বেড়ে যাবে যানবাহনের চাপ।'
হাইওয়ে ওসি বলেন, গত বছর করোনার মধ্যেও ঈদযাত্রার প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছিল। সবচেয়ে বেশি একদিনে ৫৪ হাজার যানবাহন চলাচল করেছিল উত্তরের পথে।
তবে এ বছর যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, '২৭ এপ্রিল গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর ঈদের শেষ ৩ দিন যানবাহনের চাপ প্রতিদিন ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।'

ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে উত্তরের প্রবেশ পথে বঙ্গবন্ধু ব্রিজের পশ্চিম পাড়ের মহাসড়কের ২৬টি পয়েন্টে ২৫০ জন জনবল নিয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
আগামি ২৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে ঈদযাত্রার বিশেষ নিরাপত্তার কাজ শুরু হবে বলে জানান ওসি।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে দেখা গেছে, সেতুর পশ্চিম পাড়ে ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। একই সঙ্গে সেতুর সংযোগ মহাসড়কের নলকা এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত উত্তরের প্রবেশপথের ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন ঈদযাত্রায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হবে উত্তরের যাত্রীদের এমনই আশঙ্কা করছেন পরিবহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।
বাসচালক মো. ফারুক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহাসড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য এক লেন দিয়ে ধীরে ধীরে বাস চালাতে হচ্ছে। এতে ২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। আর যদি যানজট লেগে যায় তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আসন্ন ঈদযাত্রার ভোগান্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে।'
মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় আসন্ন ঈদযাত্রা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে জানান তিনি।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে সভা হয়েছে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, যেন ঈদের আগে রাস্তার কিছু অংশ প্রশস্ত করে চলাচল উপযোগী করা হয়। নলকা এলাকায় দুই লেন উন্মুক্ত করা হবে, যেন অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মহাসড়কের উন্নয়ন প্রকল্প সাসেক-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ব্রিজের পশ্চিম মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজের জন্য কোনো যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। নলকা ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় নলকা এলাকায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই এ সমস্যা দূর করা হবে বলে আশা করছি। মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ আগামী বছরে শেষ হবে।'
বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকাসহ সেতুর পূর্ব পাড়ের অন্যান্য জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর হয়েছে, বেড়েছে যাত্রী চলাচল, পণ্য পরিবহন। আর এ কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়কে যানবাহন চলাচল। সড়ক পথে বঙ্গবন্ধু ব্রিজ হয়ে উত্তরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হওয়ায় এ পথেই যাত্রীদের চাপ বেশি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে ঈদের আগে ও পরে ৩ দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আর যাত্রী পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
নদীপথে যাত্রীদের চাপ হবে কাজিরহাট ফেরিঘাটে
উত্তরের যাত্রীদের বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচল করলেও ঈদের সময় উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদীপথ আরিচা-কাজিরহাট রুটেও যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।
কাজিরহাট ফেরিঘাটের ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে এ নদীপথে ৩টি ফেরি দিয়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এসব যানবাহনের বেশিরভাগই পণ্যবাহী ট্রাক। তবে ঈদের আগে ফেরিতে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে জানান তিনি।
গত বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাহাবুব জানান, ঈদের ছুটি হলেই নিম্ন আয়ের অনেকেই ভাঙ্গা পথে আরিচা-কাজিরহাট নদীপথ হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ফেরিঘাটে ভীড় করবেন।
যাত্রীর চাপের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে আরও একটি রোরো ফেরি ঈদের আগেই এ রুটে দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একটি রোরো ফেরি দেওয়া হলে যাত্রী পরিবহন সহজ হবে বলে জানান তিনি।
Comments