ভাসানচরে জীবন: ১ বছরে সব স্বাভাবিক
আবদুল জলিলের কাছে কক্সবাজারের ঘিঞ্জি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ে ভাসানচরের জীবন অনেক বেশি ভালো বলে মনে হচ্ছে। এখানে তিনি নিজে উপার্জন করতে পারছেন।
এক বিঘা জমিতে পালং শাক ও মুলা চাষ করেন ৪০ বছর বয়সী এই মানুষটি। সেগুলো বিক্রি করেন নিকটস্থ কাঁচাবাজারে। গত সপ্তাহের প্রতিদিনই তিনি প্রায় ৫০০ টাকা করে আয় করেছেন।
গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এ বছর অন্তত ৩০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।'
জাতিসংঘ ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রম শুরু করলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে তিনি মনে করেন।
২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে রোহিঙ্গাদের এই দ্বীপে যখন আনা হয় তখন এসেছিলেন আব্দুল জলিল। তাদের উন্নত জীবন ও জীবিকা দেওয়ার জন্য সরকার তাদের এই দ্বীপে স্থানান্তর করে।
সরকার একাধিক ধাপে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করেছে। প্রাথমিকভাবে ভাসানচরে জাতিসংঘ তাদের মানবিক সহায়তা কর্মসূচি পরিচালনা করেনি। তবে, সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘ একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসন প্রকল্পের আওতায় দ্বীপটির উন্নয়ন করেছে।
অপর রোহিঙ্গা আলী আকবর বলেন, 'সবকিছু এখন প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। যেহেতু জাতিসংঘ এখানে আসছে, আমরা আরও ভালো দিন দেখতে পাব।'
ভাসানচরে ১২০টি ইটের তৈরি গুচ্ছ গ্রাম এবং ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এখানে বন্যা সুরক্ষা বাঁধ, শিক্ষার ব্যবস্থা, কৃষি ও মাছ চাষের সুবিধা, হাসপাতাল ও খেলার মাঠ রয়েছে। দ্বীপটিতে সাহায্য সংস্থাগুলোর জন্যও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গত বৃহস্পতিবার দ্বীপটি পরিদর্শন করে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে। তবে প্রতিনিধি দলটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।
একসময় শান্ত দ্বীপটিতে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান থাকলেও এখন সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে।
তারা সেখানে কৃষিকাজ, মাছ ধরা, দোকানদারি, রিকশা চালানো এবং অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
৫ সন্তানের জননী জমিলা খাতুন বলেন, 'যদি কাজ পাই তাহলে আরও বেশি মানুষ ভাসানচরে আসতে আগ্রহী হবে। কারণ এখানে জীবন নিরাপদ এবং সবারই বাড়ি আছে। আমরা শান্তির সন্ধানে এখানে এসেছিলাম এবং সেটা পেয়েছি।'
ভাসানচরে আচে শপিংমলও। আইল্যান্ড মলের নিচতলায় একটি সুপার শপ, আধুনিক সেলুন এবং লন্ড্রি রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় একটি রেস্তোরাঁ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রয়েছে রুম।
শপিংমলের ম্যানেজার আব্দুল হান্নান বলেন, 'আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। এটা মাত্র ৩ মাস আগে শুরু করেছি।'
ভাসানচর উন্নয়ন প্রকল্পের উপপরিচালক আনোয়ারুল কবির জানান, গত ১ বছরে রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা সম্পদের ঘাটতির কারণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলেও এখন জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে পাচ্ছেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংস সামরিক দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর এই দ্বীপে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এর আগে দেশটিতে থাকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দেয় তারা।
ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে।
Comments