‘বিমান টিকিটের দাম কমিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছে’

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইটের টিকিটের দাম কমিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে ব্যবসার ক্ষেত্র নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেছে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।

এ বিষয়ে রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান।

চিঠিতে বলা হয়, '১৯৯৬-২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরে দেশে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো দাঁড়ানো শুরু করে। সে সময় যাত্রীদের কোনো ধরনের সেবা না দিয়েই দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ একচেটিয়া ফ্লাইট পরিচালনা করত। তখনকার মনোপলি মার্কেট বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেন।'

'বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ অভ্যন্তরীণ যাত্রী বেসরকারি এয়ারলাইনস বহন করছে, আর বিমান ২০ ভাগ করছে।' এ তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইতোমধ্যে জিএমজি এয়ারলাইনস, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

এয়ারলাইনসগুলো বন্ধের কারণ হিসেবে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাজের চার্জগুলোকে দায়ী করা হয় চিঠিতে।

'তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ বরাবরই বাদ পড়ে যায়। সেটি হলো রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের "লুণ্ঠনমূলক অপকৌশল"। বর্তমানে বিমান বিভিন্ন রুটের টিকিটের দাম কমিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকায় ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানের এ অপকৌশল বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইনসকে দাঁড়াতে দেয়নি। দেশে মোট ৮টি বেসরকারি এয়ারলাইনস হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও, বিমানের কারণে তারা অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে,' চিঠিতে বলা হয়।

'বিমানের অপকৌশলের কারণে বর্তমানে নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস কোনোরকমে টিকে আছে,' চিঠিতে বলেন এওএবি মহাসচিব।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ছিল ২ হাজার ৮৫০ টাকা। জিএমজি এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। তখন বিমান তাদের ভাড়া কমিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে ফেলে।

এওএবি জানায়, এক সময় যখন দুবাই রুটে জিএমজি এয়ারলাইনস অধিকসংখ্যক যাত্রী বহন করত, তখন বিমান তাদের ভাড়া ৪৭৫ মার্কিন ডলার থেকে নামিয়ে ৩৫০ ডলার করে ফেলে। এর পরপরই জিএমজি তাদের অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, 'বেসরকারি এয়ারলাইনসকে প্রতি বছর এওসি (এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট) নবায়নের সময় বেবিচকের সব ধরনের চার্জ নগদে পরিশোধ করতে হয়। নগদ অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয় তেল। অথচ বিমান বছরের পর বছর বেবিচকের বিভিন্ন চার্জ বাকি রেখে এবং পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে বাকিতে জেট ফুয়েল কিনছে। এ দুই ক্ষেত্রেও বিমানের সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর বৈষম্য করা হয়।'

'শুধু তাই নয়, বিমান প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ রুটে বড় সাইজের ফ্লাইট (বোয়িং-৭৩৭ এর মতো) পাঠিয়ে ১৫০০-১৮০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী বহন করেছে। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো একসময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে কানেক্টিং ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। তবে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর থেকে এভাবে যাত্রী বহন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় বেবিচক,' যোগ করা হয় চিঠিতে।

সংগঠনটির অভিযোগ, 'বেবিচকের নির্দেশ অমান্য করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এখনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী বহন করছে। এ ছাড়া এখনো বিমান অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের প্রতি সিটে ২ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে বছরে বিমানের ১৬০ থেকে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

1h ago