বীরাঙ্গনাদের গেজেটভুক্ত হওয়া, ভাতা ও ঘর বরাদ্দে হয়রানি: টিআইবি
বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন নিষ্পত্তিতে সময়সীমা সুনির্দিষ্ট করা না থাকায় তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গেজেটভুক্ত হতে ৩ বছরের বেশি সময় লাগছে।
বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, বীরাঙ্গনারা গেজেটভুক্ত হওয়ার পর ভাতা পেতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩-৬ মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ 'বীর নিবাস'-এর ঘরের জন্য আবেদন করার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ঘর না পাওয়ার অভিযোগ আছে।
টিআইবি আজ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে 'বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানায়।
সরকার ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। চলতি বছরের ২৪ মে পর্যন্ত দেশে ৪৪৮ জন বীরাঙ্গনা গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ২ লাখ নারী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে সরকারিভাবে ধারণা করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বীরাঙ্গনারা এখনো প্রান্তিকীকরণের শিকার। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ও নারী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক কাজ থাকলেও তা নারী বিষয়ক অন্য যেকোনো কাজের তুলনায় বেশ অপ্রতুল।
গেজেটভুক্তির বিভিন্ন ধাপে বেশিরভাগ আবেদনকারী বীরাঙ্গনাই নানা পক্ষ হতে বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হন। তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়েরও অভিযোগ আছে। এছাড়া প্রশাসনিক পর্যায়ে কোনো আবেদন জমা দেওয়ার সময় পিয়ন বা সহকারীদেরকে চা নাস্তা খাওয়ার টাকা দেওয়ার এক ধরনের অলিখিত নিয়ম রয়েছে বলে প্রতিবেদনে টিআইবি জানিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সরকারিভাবে গুরুত্ব না পাওয়া এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রান্তিকীকরণের শিকার। বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পুরো প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের সুশাসনের ঘাটতি আছে।'
গেজেটভুক্ত ৪৪৮ জন বীরাঙ্গনার মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১০৭ জন, রংপুর বিভাগে ৬১ জন, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ৫৩ জন করে ১০৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫১ জন, খুলনায় ৫০ জন, বরিশালে ৪৩ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন ৩০ জন।
Comments