যে কারণে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাননি বেশিরভাগ শিক্ষাবিদ

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেকে ব্যক্তিগত সমস্যা এবং অনেকে অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন এই সংলাপ ‘লোক দেখানো’ ও অর্থবহ হবে না মনে করে যাননি তারা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেকে ব্যক্তিগত সমস্যা এবং অনেকে অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন এই সংলাপ 'লোক দেখানো' ও অর্থবহ হবে না মনে করে যাননি তারা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে গতকাল রোববার প্রথম দিনে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে সংলাপে ১৭ জন শিক্ষাবিদই যাননি। সংলাপে না যাওয়া ৬ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়েছে।

সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ঢাবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস থাকায় আমি যেতে পারিনি। যারা উপস্থিত ছিলেন তারা যা বলেছেন সেগুলো মানলেই তো আর সমস্যা হবে না।'

নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকতা থেকে বের হয়ে এসে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'আগামীতে আশা করব নির্বাচন কমিশনার যারা আছেন তারাই যেন আগ্রহী হয়ে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেমন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার শারীরিকভাবে অসুস্থ, তিনি আসতে পারবেন না। তাকে ফোন করে মতামত নেওয়া যেতো এবং রেকর্ডটি মিটিং চলাকালে সবাইকে শোনানো যেত। আমি খুশি হতাম যদি এরকম একটি সুন্দর উদাহরণ তৈরি হতো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি নিজেই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারসহ যারা যাননি এমন কয়েকজনকে ফোন করে মতামত নিতেন তাহলে ভালো হতো।'

তিনি বলেন, 'আনুষ্ঠানিকতার খোলস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ নির্বাচনটা আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়। যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন ব্যবস্থা অনানুষ্ঠানিক ছিল ততদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয়নি। দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার পরেই নির্বাচন মরে গেল।'

'তারা (নির্বাচন কমিশনার) যেখান থেকে গেছেন সেখানে আদেশ করা হয় এবং মানুষ তা পালন করেন। তাদের সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তারা যদি নিজেরাই বিএনপিসহ বিভিন্ন দলকে ফোন করেন, তাহলে আমি আশাবাদী যে কোনো না কোনো সময় বরফ গলবে,' তিনি যোগ করেন।

ঢাবির সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'নানা ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। পরবর্তীতে কোনো সংলাপে ডাকা হলে এবং সময় ও সুযোগ মিললে অবশ্যই যাবো। তবে এই কমিশন সংলাপে সবার প্রথমে শিক্ষকদের ডেকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তাতে অবশ্যই তারা প্রশংসার যোগ্য।'

সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, 'আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা ভালো না। আমাদের কথাগুলো শুধু শোনা হয় কিন্তু বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তা ছাড়া এই কমিশনে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা এতোই বিতর্কিত যে, আমার মনে হয় না তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।'

সংলাপকে অনেকটা 'লোক দেখানো' দাবি করে আইনের এই অধ্যাপক বলেন, 'নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন তারা ভালো করেই জানেন তাদের কী করতে হবে। তারা নিজেরাই যদি একটা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন এবং আমাদের মতামত চাইতেন তাহলেই সবচেয়ে ভালো হতো।'

কাগজে কলমে নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী হলেও বাস্তবে তাদের ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল ইসলাম বলেন, 'সরকার যা চায় তাই হয়। নির্বাচনের সময় যারা মাঠ পর্যায়ে থাকেন তারা নির্বাচন কমিশনের হয়ে কাজ করেন না। তারা কিন্তু সরকারের হয়েই কাজ করেন।'

তিনি বলেন, 'সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এই সংলাপ অর্থবহ হবে না। অহেতুক সময়ক্ষেপণ করে কোনো লাভ নেই। তাই সংলাপে যাইনি।'

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ব্যক্তিগত মিটিংয়ের কারণে সংলাপে যাননি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt servants must submit wealth statements by November

Government servants will need to submit their wealth statements every year, instead of every five years as they were previously required

50m ago