নির্বাচন বর্জনে অর্জন দেখছে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনে করছে তারা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ না নিয়ে লাভবান হয়েছে।

দলটি জানিয়েছে, এই নির্বাচন থেকে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা আরও বেশি উন্মোচিত হয়েছে, দলের কর্মীরা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং তিক্ত অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল পর্যায়ে আরও দুর্বল হয়ে গেছে।

শীর্ষ বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, 'এই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।'

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি প্রমাণিত হয়েছে, তা হলো দেশে কোনো নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব নেই। মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছে।'

২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচন বর্জন করার পর দলটি সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং নির্বাচনী মার্কা 'ধানের শীষ' নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা অংশগ্রহণ করেছে।

তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থায়ী কমিটির সভা শেষে বিএনপি ঘোষণা দেয় তারা ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলের নেতারা জানান, তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন কারণ তাদের ধারণা ছিল সরকারের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে।

কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন—সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন তাদেরকে হতাশ করেছে এবং এর ফলে বিএনপি ইউপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

আজ ৮৪৬ ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে এবং ২৮ নভেম্বর আরও ১ হাজার ৪টি ইউপি নির্বাচন হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার দুলু বলেন, 'আগের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে আমাদের কী লাভ হয়েছে? কিছুই না। বরং আমাদের নেতাকর্মীদের নামে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে। তাহলে কেন আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো?'

তিনি জানান, ইউপি নির্বাচন বর্জন করে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের কোনো আর্থিক ক্ষতি হয়নি এবং তাদেরকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো মামলার মুখোমুখিও হতে হয়নি।

তিনি বলেন, 'সামনে সাধারণ নির্বাচন। এ সময় আমাদের একাত্মতা বজায় রাখা প্রয়োজন। বিএনপির মতো বড় দলের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বড় আকারের প্রতিযোগিতা রয়েছে এবং এতে কখনো কখনো দলে আভ্যন্তরীণ বিভাজন সৃষ্টি হয়। কেন আমরা এ ধরনের প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলের সাংগঠনিক শক্তিমত্তাকে দুর্বল করবো, যখন আমরা আগে থেকেই ফলাফল জেনে গেছি?'

বিএনপি নেতারা আরও জানান, প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলের চলমান ইউপি নির্বাচন বয়কটের বিষয়টিকে তারা দলের জন্য বড় অর্জন হিসেবে বিবেচনা করছেন, কারণ অন্য দলগুলো তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে।

বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৫ লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৫০০ জনকে গুম করা হয়েছে এবং ১ হাজার জনকে হত্যা করা হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনই ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত সংঘর্ষে প্রাণ হারান।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, নরসিংদী ও ঢাকার ধামরাই উপজেলায় এ মাসে নির্বাচন পূর্ব সহিংসতায় কমপক্ষে ৯ জন মারা গেছেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে 'বিদ্রোহী' প্রার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপির নেতারা নির্বাচনী দৌড়ে

যদিও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে, তবুও দলের অনেক সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

উদাহরণ হিসেবে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার মুর্শিদহাট ইউনিয়নের ওয়াক্কাস আলী কাঞ্চনের কথা বলা যায়।

তিনি বলেন, 'দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইচ্ছায় আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি স্থানীয়দের অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে পারি না।'

একই উপজেলার ইশানিয়া ইউনিয়নে কোনো বিএনপি নেতা ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। আলমগীর শাহ নামক একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা এর আগের ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু এবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।

তিনি বলেন, 'আমার কাছে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে অর্থহীন মনে হয়। মানুষ জানে, যদি প্রার্থী 'নৌকা' মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে, তাহলে তিনি জিতবেন। তাহলে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভ কি?'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Tamim Iqbal

Tamim announces retirement from international cricket, again

Bangladesh's star opener Tamim Iqbal announced his retirement from international cricket through a post from his official Facebook page today.

37m ago