তারা সবাই নির্বাচন কমিশনার হতে চান
নতুন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার হিসেবে মনোনয়ন পেতে অন্তত ১৮০ জন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নিজেদের নাম জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে সাবেক আমলা ও সাবেক বিচারপতিসহ সাধারণ নাগরিকরাও আছেন।
এর বাইরে ৫টি রাজনৈতিক দল তাদের বাছাই করা নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ) আছে।
এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) ছিল নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন। আমরা ১৮০ থেকে ১৯০ জনের নাম পেয়েছি।'
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে কারা মনোনয়ন চেয়েছেন– জানতে চাইলে শফিউল আজিম এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। তবে জানান, নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করেই সবাই যার যার নাম জমা দিয়েছেন।
নতুন ইসির জন্য মনোনীত হতে হলে একজন ব্যক্তিকে ন্যূনতম ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অথবা বিচারিক পদে তার ২০ বছর কিংবা তার বেশি সময় কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সূত্র জানায়, সাবেক আমলা ও সাবেক বিচারপতিদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের নাম জমা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ নাম পাঠিয়েছেন ই-মেইলের মাধ্যমে।
তারা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের নাম জমা দেয়নি। এদিকে বিএনপি আগেই বলেছে যে, সার্চ কমিটিতে মনোনয়নের জন্য তারা কোনো নাম পাঠাবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের পছন্দের নাম জমা দিতে পারবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সার্চ কমিটির কাছে সশরীরে নারীসহ মোট ১০ জনের নাম জমা দিয়েছি।'
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও বলেন, 'আমরা নাম পাঠিয়েছি। আর আমাদের প্রস্তাবিত নামগুলো প্রকাশ না করার জন্য সার্চ কমিটিকে অনুরোধ করেছি।'
৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রথম বৈঠকের পর সিইসি ও ইসি পদে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সিভি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ই-মেইল অথবা সশরীরে এসে জমা দেওয়ার আহ্বান জানায়।
এর আগে ২০১২ ও ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হলেও ওই কমিটিগুলো কখনোই ব্যক্তিদের নাম জমা দিতে বলেনি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২'এর আওতায় এই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।
এই আইন অনুসারে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ১০টি নাম প্রস্তাবের জন্য কমিটির কাছে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
আপিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত এই সার্চ কমিটির অন্য ৫ সদস্য হলেন- হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত ২জন বিশিষ্ট নাগরিক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সার্চ কমিটি পরবর্তী ইসি গঠনের বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাব নেওয়ার জন্য আগামী শনি ও রবিবার প্রায় ৬০ জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠনের বিষয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। তবে এই সংলাপকে 'অর্থহীন' আখ্যা দিয়ে বিএনপিসহ আরও ৭টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি।
অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments