নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

আইভি বনাম তৈমূর: কারোই নেই নিজ দলের পূর্ণ সমর্থন

সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত

শীতের সকালে শত বছরের পুরনো বোস কেবিনের সামনে বসে চা খাচ্ছিলেন তরিকত হোসেন, তার বন্ধু আনোয়ার হোসেনসহ ৪-৫ জন ষাটোর্ধ্ব মানুষ।

তাদের কাছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং প্রধান আলোচনায় থাকা ২ প্রার্থীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা এই দায়িত্ব দেন তরিকতকে।

কেশে গলা পরিষ্কার করে তরিকত জানান, আইভির সঙ্গে নেই আওয়ামী লীগের একাংশ, তৈমূরের সঙ্গে নেই জেলা বিএনপির অনেক নেতা। ২ প্রার্থী নিজেদের মতো করে নির্বাচন করছে। পরিবেশ এখনো পর্যন্ত খুবই ভালো। তৈমূরকে যদি বিএনপি থেকে অব্যাহতি না দিতো, তাহরে খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো। আর আইভি যদি বন্দরের মতো শহরেও কিছু উন্নয়ন করতো, তাহলে আইভির মাঠ আরও ভালো থাকতো।

তরিকতের কথায় সায় দিলেন তার বন্ধু আনোয়ার। বললেন, নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ। তবে জয়-পরাজয়ের হিসেব নিকেশ পরিষ্কার হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

১৬ জানুয়ারির নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আরও বেশ কিছু স্থানীয় ও ২ দলের সূত্ররা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।

এই নির্বাচনে ৫ লাখ ভোটার পরবর্তী ৫ বছরের জন্য তাদের মেয়র নির্বাচিত করবেন।

দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বিএনপি সম্প্রতি তৈমূরকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ থকে অব্যাহতি দিয়েছে। এর আগে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে।

যখন তিনি প্রচারণা শুরু করেন, তখন দলের বেশ কিছু নেতা তার পাশে ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন রোজেল ও আবদুল হাই রাজু। কিন্তু এখন মাত্র অল্প কয়েকজন তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যাদের মধ্যে জেলা বিএনপির মহাসচিব এটিএম কামাল অন্যতম।

সূত্ররা জানিয়েছেন, সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের হাতে শহরের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। তিনিও তৈমূরের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত নন। তবে গিয়াস উদ্দিন তার ছেলে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী গোলাম সাদরিলের জন্য ভোট চাইছেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, সাদরিল নিজে আইভির জন্য প্রচারণায় ব্যস্ত।

তৈমূরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, সব স্থানীয় বিএনপি নেতার কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন এবং তারা 'নিজ নিজ অবস্থান' থেকে তার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অপরদিকে, আইভি প্রভাবশালী ওসমান পরিবার ও তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে যথোপযুক্ত সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ সূত্ররা। তারা আরও জানান, দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও আইভির মধ্যের দ্বন্দ্বের কথা 'ওপেন সিক্রেট' ছাড়া আর কিছুই নয়।

নারায়ণগঞ্জ শহর ঐতিহাসিকভাবে ওসমান পরিবারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তা স্বত্বতেও, ২০১১ সালের মেয়র নির্বাচনে আইভি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

সূত্ররা জানান, শামীম ওসমানের অনুসারীরা এখনও আইভির প্রচারণায় যোগ দেননি এবং শোনা যাচ্ছে, তারা গোপনে তৈমূরকে সমর্থন দিচ্ছেন।

সূত্ররা আরও জানান, শামীম ওসমানের নিকটতম সহযোগী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের মহাসচিব খোকন সাহা, সহ সভাপতি চন্দন শীল ও যুগ্ম সচিব শাহ নিজাম আইভির পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিলেও তারা সেভাবে সক্রিয় নন।

দ্য ডেইলি স্টার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আইভি বলেন, 'সব তৃণমূল নেতারা আমার সঙ্গে আছেন। ওসমান পরিবারও আওয়ামী লীগের অংশ। কিন্তু শামীম ওসমান একজন সংসদ সদস্য। তাই তিনি নিজে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না।'

তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

একাধিক তৃণমূল কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আইভি ও তার অনুসারীরা নারায়ণগঞ্জে 'দলের মধ্যে বিভেদ' সৃষ্টি করেছেন।

তারা জানান, আইভি শুধুমাত্র বন্দর এলাকায় সক্রিয় ছিলেন, সারা শহরে নয়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন নেতা বলেন, 'আইভি নিজেকে আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান ও আস্থাভাজন নেতাদের থেকে আলাদা করে রেখেছেন। তিনি শুধুমাত্র নিজের অনুসারীদের নিয়ে রাজনীতি করেন। তিনি চাইলেই এই পরিস্থিতি এড়াতে পারতেন।'

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, যদিও তৃণমূল কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে আইভির খুব একটা সংযোগ নেই, তবুও তারা তার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। কারণ মেয়র পদের জন্য তাকেই দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।

এ বিষয়ে ওসমান পরিবারের ভূমিকা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আনোয়ার বলেন, 'কী হয় সেটা দেখার জন্য আরও কয়েকটা দিন লাগবে। তাদের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই। এখানে আইভি কোন ইস্যু নন, "নৌকা" হচ্ছে ইস্যু।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Major trade bodies miss election deadline

Major trade bodies miss election deadline as reforms take centre stage

Elections at major trade bodies have missed the 90-day deadline as new administrators of the business organisations seek amendments to the governing rules.

17h ago