মগবাজার বিস্ফোরণে দায়ী মিথেন গ্যাস: তদন্ত কমিটি
ভবনের ভেতরে গ্যাস পাইপ লিকেজ ও সুয়ারেজ লাইন থেকে জমে যাওয়া বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাসের কারণে গত মাসে রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে জানা গেছে দমকল বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন থেকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, জমে থাকা গ্যাস বৈদ্যুতিক স্পার্কের সংস্পর্শে এসেছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ১৩ জুলাই জমা দেওয়া প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তিন তলা ভবনটির নিচতলার মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কক্ষ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেনেন্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যখন অনেক বেশি পরিমাণ মিথেন গ্যাস একটি ছোট ঘরে জমা হয়, তখন একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র স্পার্ক, এমন কি চোখে দেখা যায় না বা কানে শোনা যায় না, এরকম স্পার্কও এ ধরণের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।’
গত ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের ওয়ারলেস গেট এলাকায় বিস্ফোরণের প্রভাবে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং আরও অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিস্ফোরণের প্রভাবে ভবনটি আংশিকভাবে ধ্বসে পড়ে এবং আশেপাশের বেশ কিছু স্থাপনার কাঁচের দেয়াল ভেঙে যায়।
জিল্লুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার দিন দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় দালানে গ্যাস পাইপলাইন খুঁজে পায়, কিন্তু তিতাস গ্যাস সেখানে কোনো গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করে।
এ ছাড়াও পরিদর্শনকারী দলটি দালানের ভেতরে একটি সুয়ারেজের গর্ত খুঁজে পায় বলে জানান তিনি।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ছয় দফা সুপারিশ জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে তিতাস গ্যাসের পুরনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা এবং ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের নকশা পরিবর্তন।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যেকোনো দালান নির্মাণের আগে নিশ্চিত করতে হবে, সেখানে মাটির নিচে কোনো পাইপলাইন নেই। যখন সিটি করপোরেশন কোনো এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোনো ধরণের কার্যক্রম করে, তখন তা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। যাতে কোনো পাইপে লিকেজ না হয়।
গ্যাস সরবরাহ কর্তৃপক্ষের উচিৎ পাইপলাইন ও সংযোগ স্থাপনমূলক লাইনগুলোকে নিয়মিত বিরতিতে পরীক্ষা করা এবং কোনো লিকেজ আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া। আরও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সুয়ারেজ লাইন থেকে কোনো ধরণের গ্যাসের লিকেজ না হয় এবং দালানের প্রতিটি কক্ষে যেন বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা থাকে।
এ ঘটনায় গঠিত পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি এখনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, তারা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছেন গ্যাসের কারণেই বিস্ফোরণটি ঘটেছিল এবং গ্যাসের পাইপলাইনে লিকেজ ছিল।
তিনি বলেন, ‘এ ধরণের বিস্ফোরণ এয়ার কন্ডিশনার অথবা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে হতে পারে না।’
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।
Comments