টাঙ্গাইলে শিডিউলের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং, সীমাহীন দুর্ভোগ

দেশজুড়েই চলছে লোডশেডিং। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

জ্বালানি সাশ্রয়ে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলেও এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে চলছে না। শহর এলাকার থেকে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও দিন-রাত মিলিয়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

এ অবস্থায় লাগাতার লোডশেডিংয়ে ও প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে পড়ছে এর প্রভাব।

টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, পিক আওয়ারে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৬০ মেগাওয়াট থেকে ২৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু এখন জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ মেগাওয়াট থেকে ১৬০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ। যে কারণে নির্ধারিত সময়সূচির বাইরে গিয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

জেলার ভূঞাপুর উপজেলার পূর্ব ভূঞাপুর এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ ঘোষ জানান, শিডিউল অনুযায়ী তাদের এলাকায় লোডশেডিং হওয়ার কথা সকাল ৯টা থেকে ১০টা এবং রাত ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু আধঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা পরপরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'গতকালও (বৃহস্পতিবার) সারারাত বিদ্যুৎ ছিল না। প্রচণ্ড গরমে সারারাত ঘুম হয়নি। শেষবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ গিয়ে এসেছে ভোর ৫টায়।'

সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন হায়দারের ভাষ্য, তাদের এলাকার শিডিউল অনুসারে সকাল, দুপুর ও রাতে মোট ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু তারা ২৪ ঘণ্টায় ৩-৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। কখনো কখনো টানা ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

নাগরপুর উপজেলা সদরের দোয়াজানি এলাকার এরশাদ মিয়ার ভাষ্য, 'কিসের শিডিউল? আমরা কোন শিডিউলই পাইনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। কখন বিদ্যুৎ আসবে কিংবা কখন যাবে এর কোনো সময়সূচি নেই। কষ্টেরও সীমা নেই।

এদিকে শহর এলাকায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ খানিকটা কম হলেও এখানেও শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

শহরের ভিক্টোরিয়া রোড এলাকার বাসিন্দা শিহাব মিয়া জানান, তার এলাকায় শিডিউল অনুযায়ী দিনে ১ ঘণ্টা করে ২ বার লোডশেডিং দেওয়োর কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার।

এ ব্যাপারে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে  তিনি বলেন, 'সামনে বাচ্চাগুলোর পরীক্ষা। সবাই গরমে কাহিল। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে কখন?'

শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকার একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সারাইয়ের দোকানের মালিক আমিনুল ইসলাম লিটন জানান, দিনের একটি বড় সময় বিদ্যুৎ থাকায় কোনো কাজই ঠিকঠাক করতে পারছেন না তিনি। বলেন, 'ঈদের পর এমনিতেই কাজ কম। তার উপর বিদ্যুতের এই অবস্থা। আগে দিনে ৫০০-৭০০ টাকার মতো রোজগার হতো। এখন ২০০-৩০০ টাকার বেশি হয় না।'

একই এলাকার সেলুনমালিক মিন্টু শীল জানান, গরমে বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রাহক আসে না। তাই বেশিরভাগ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক রিপন কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পিক আওয়ারে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা কমপক্ষে ১১০ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্রিড থেকে ৭০-৭৫ মেগাওয়াটের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।

পিডিবির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবায়দুল ইসলামের ভাষ্য, তাদের বিদ্যুতের চাহিদা কমপক্ষে ১৪০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৮০ মেগাওয়াটের মতো। সবাইকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য প্রতিদিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'নিতান্ত বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Managing expectations the challenge for EC

The EC was a rubber stamp to legalise AL's usurpation of power in last three elections

3h ago