ছাগলের ফেরিওয়ালা
ঢাকার পান্থপথে সড়ক বিভাজকের ওপর ৬টি ছাগল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেল বগুড়ার ধুনট থেকে আসা হাশমত ফকিরকে। সঙ্গে কিশোর ছেলে ইমরান ফকির।
কিছুক্ষণের ভেতর ছাগল কেনার অভিপ্রায়ে সেখানে উপস্থিত হন পান্থপথ এলাকার এক বাসিন্দা। তার সঙ্গে হাশমত ফকিরের কথোপকথনের ধরনটা ছিল এরকম-
ক্রেতা: বড় ছাগলডি কত নিবা?
হাশমত: ২৭ হাজার, এক দাম।
ক্রেতা: কি কও মিয়া? কত মাংস হইবো?
হাশমত: ২৫ কেজির কম না।
ক্রেতা: চাপাবাজির জায়গা পাও না। এই ছাগলের মাংস হইবো ২৫ কেজি! ফাইজলামি করো?
হাশমত: মাংস ১ কেজি কম হইলে ৫০ হাজার ট্যাকা দিমু। সঙ্গে ছাগল ফাও।
ক্রেতা: ট্যাকা আছে নি তোমার লগে?
হাশমত: ছাগলের ব্যবসা করি। ট্যাকা থাকব না? ফকির-ফাকড়া তো আর না।
আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে কোরবানির ঈদ। এর ২ দিন আগে আজ শুক্রবার হাশমত ফকির ও তার ছেলের মতো আরও অনেক ভ্রাম্যমাণ ছাগল বিক্রেতার দেখা মিলল রাজধানীর পথে পথে। বাড়িতে পালিত কিংবা স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ছাগল নিয়ে তারা কেউ এসেছেন মানিকগঞ্জ থেকে, কেউ কিশোরগঞ্জ কিংবা ফরিদপুর থেকে। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিক্রি শেষ করে বাড়ি ফিরবেন সবাই।
এই ভ্রাম্যমাণ ছাগল বিক্রেতারা জানালেন, প্রায় প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে আগে একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায় তারা ঢাকায় ছাগল নিয়ে আসেন। সেই সূত্রে অনেক ক্রেতা আগে থেকেই পরিচিত হয়ে যাওয়ায় শুরুতেই বেশ কিছু ছাগল বিক্রি হয়ে যায়। বাকি ছাগলগুলো পথে পথে ঘুরে অনেকটা ফেরি করে বিক্রি করেন তারা। রাতে থাকেন কোনো মেসে। আবার সুবিধামতো জায়গা দেখে ছাগল নিয়ে পথেও রাত কাটিয়ে দেন অনেকে।
আজ সকালে আগারগাঁওয়ের তালতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হলো এমন আরও ২ জন ছাগল বিক্রেতা শামসুল হক ও আবুল হোসেনের সঙ্গে। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
চাচা শামসুল হক জানালেন, মানিকগঞ্জ থেকে ১০টি ছাগল নিয়ে আজ সকালেই ঢাকায় পৌঁছেছেন তারা। এই এলাকায় তাদের পরিচিত কয়েকজন ক্রেতা আছেন। তাদের কাছে থাকা ছাগলগুলোর দাম আকার ও ওজনভেদে ১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।
ধানমন্ডি সোবহানবাগ মসজিদের সামনে কথা হয় বিক্রেতা জগলুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায়। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে ফরিদপুর থেকে ১৫টির মতো ছাগল আনিয়েছেন বিক্রির জন্য।
জগলুল বলেন, 'হাটে নিয়া ছাগল বিক্রি করার বিষয়ডা ঝামেলার। জায়গা পাইতে যুদ্ধ করন লাগে। হাসিল দিতে হয়, চান্দা দিতে হয়। তার চাইতে রাস্তাই ভালো।'
ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে পথে দাঁড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার সঙ্গে ছাগলের দামদর করতে দেখা গেল চাকরিজীবী মহসীনুল হাকিমকে। জানালেন, এবার প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগে একটি গরু কোরবানি দিচ্ছেন তিনি। ছাগল কিনছেন মেয়ের আবদার মেটাতে। বললেন, 'হাটে গিয়ে ছাগল কেনাটা অনেক ঝক্কির। তাই ভাবলাম পথ থেকেই কিনে নেই।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর দেশে মোট ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৩২ জন খামারির কাছে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। আর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৫টির।
কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে আছে ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৭টি গরু ও ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি মহিষ। ছাগলের সংখ্যা ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি। এ ছাড়া ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮২টি ভেড়া এবং ১ হাজার ৪০৯টি অন্যান্য পশুও আছে।
এদিকে ঈদের আগেই কিনে রাখা কোরবানির পশুর খাবারের চাহিদা মেটাতে ঢাকার অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠেছে কুড়া, ভুষি, খড়, ঘাস-বিচালি ও কাঁঠালের পাতা বিক্রির অনেক অস্থায়ী দোকান। পাশাপাশি সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাংস কাটার কাঠের গুঁড়ি, হোগলা ও ব্লিচিং পাউডারের মতো বিভিন্ন উপকরণ।
আবার কেউ কেউ ভ্যানে করেই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিক্রি করছেন এসব জিনিস।
দেখা গেল, বিক্রেতারা প্রতি আটি কাঁঠালের পাতা বিক্রি করছেন ২০ টাকায়। ঘাসের দাম চাচ্ছেন ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। আর খড় ৩ আটি নিলে দাম রাখছেন ৫০ টাকা।
Comments