গংগাচড়ার বানভাসিদের নিরানন্দ ঈদ

ঈদের দিনেও ঘর তৈরির কাজে ব্যস্ত সৌখিন বিবি। ছবি: স্টার

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত দরিদ্র পরিবারের কাছে ঈদুল আজহার আনন্দ অধরাই রয়ে গেছে।

তাদের অনেকের বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও নেই।

নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হওয়া রংপুরের গংগাচড়া উপজেলায় একটি বড় সমস্যা এবং প্রতি বছর শত শত মানুষ এর শিকার হন।

উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত।

ঈদের নামাজ পরে ঘরে ফিরছেন তারা। ছবি: স্টার

গত কয়েকদিন গংগাচড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন।

শংকরদহ গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, 'নদী ভাঙন অগ্নিকাণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। আগুনে সব পুড়ে গেলেও জমিটাতো থাকে। নদী ভাঙনের শিকার হলে স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই থাকে না।'

৩৫ বছর বয়সী আব্দুল খালেক এ পর্যন্ত ৬ বার নদী ভাঙনের কবলে পরেছেন।

গংগাচড়া উপজেলার গ্রামগুলোতে এখন কাজের সংকট। কৃষি কাজ ও মাছ ধরা এই এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস। কবে, জুলাই ও আগস্ট মাসে এই ধরণের কাজের সংকট থাকে।

এ ছাড়া, তিস্তায় মাছ কমে যাওয়ায় পেশাটিও আর লাভজনক নয়।

কোনো শিল্প-কারখানা না থাকায় এই এলাকার মানুষের বিকল্প আর কোনো আয়ের উৎস নেই। ফলে, কাজের সন্ধানে এই উপজেলার পুরুষদের যেতে হয় অন্য কোনো জেলায়।

আজ রোববার ঈদের দিন দুপুর ১টার দিকে আব্দুল খালেকের বাড়িতে গিয়ে জানা যায় তিনি ঘুমিয়ে আছেন।

ঘুম থেকে উঠে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'সকালে ঈদের নামাজ আদায় করে বাসায় এলাম। ওই পর্যন্তইতো শেষ। ঈদ আসলে আমাদের জন্য না।'

তিনি জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে বন্যায় বাড়ি ভেসে যাওয়ার পর শংকরদহ গ্রামে অন্য ৮টি পরিবারসহ তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'যা সঞ্চয় ছিল সব খরচ হয়ে গেছে নতুন করে ঘর তুলতে। কোনো কাজ নেই। ঋণ বাড়ছে শুধু। সেইসঙ্গে কিস্তির টাকার চাপ তো আছেই। প্রতি সপ্তাহে ৮০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়।'

আব্দুল খালেকের আত্মীয় ৫৫ বছর বয়সী গৃহবধূ সৌখিন বিবি জানান, স্বামী ও ৪ ছেলে নিয়ে তার সংসার। তার দিনমজুর স্বামী গত এক মাস ধরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না।

ঈদে তাই বিশেষ কোনো খাবার রান্না হয়নি পরিবারটিতে।

মহিপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'উপজেলার মহিপুর, শংকরদহ, চর ইছলী ও বাগেরহাট গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ গত এক মাস ধরে কর্মসংস্থানহীন। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার আরও বেশি দুর্ভোগে পরেছে।'

তিনি আরও বলেন, '৪৫ বছরের জীবনে এ পর্যন্ত ২৫ বার নদী ভাঙনের কবলে পরেছি।'

ঈদের আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিশেষ কোনো খাবার রান্না হয়নি।

মোস্তাফিজ শুনেছেন, অনেকেই সরকারি সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু, এ বছর তিনি কোনো সরকারি সাহায্য পাননি।

মহিপুরের মমিনুল ইসলাম জানান, তিনি সিলেটে রিকশা চালাতেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরপরই সেখানে তীব্র বন্যা শুরু হয়।

তিনি বলেন, 'এই এলাকায় শিল্পায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসংস্থান সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।'

এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টিও কামনা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago